নীতিবিজ্ঞান কি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান?


প্রশ্নঃ নীতিবিজ্ঞান কি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান?

ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানব আচরণকে মূল্যায়ন করে থাকে। নীতিবিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণের ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় মূল্যায়ন করে থাকে। নীতিবিজ্ঞান আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হলেও বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়।

নীতিবিজ্ঞান কি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানঃ আমরা জানি, বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুশৃঙ্খল ও সুনির্দিষ্ট জ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয়। নীতিবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ বা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান কি না তা জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলতে মূলত কি বুঝায়? বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানকে অনেক সময় বর্ণনামূলক বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানও বলা হয়ে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কীয় অবধারণ, অর্থাৎ বস্তু বা ঘটনার প্রকৃত অবস্থা নিয়ে জড়িত বলে বস্তু বা ঘটনার স্বরূপ, উৎপত্তি, বিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে সুসংহতরূপে আলােচনা করে। যেমন- পদার্থবিদ্যা জড় বা পদার্থের প্রকৃত অবস্থা বা স্বরূপের বিশ্লেষণ করে থাকে।

বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান প্রধানত ঘটনামূলক সত্য নিয়ে আলােচনা করে এবং সেই সত্যের কারণ আবিষ্কার করে থাকে। বিজ্ঞান কার্যকারণ সম্পর্কের মাধ্যমে অন্যান্য কিছুর সঙ্গে এর সম্ভাব্য সম্পর্কের ধরন কী রকম হবে তা নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নীতিবিদ্যা মানব আচরণের স্বরূপ, প্রকৃতি, বিকাশ এবং মানবীয় কর্মকাণ্ডকে বিশেষ কোনাে আইনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে না। অথবা মানব আচরণের মধ্যে কোনাে প্রকার কার্যকারণিক সম্পর্ক আবিষ্কার করাও নীতি বিদ্যার মূল লক্ষ্য নয়। নীতিবিদ্যা মূলত সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে। আর এ মূল্যায়ন করে থাকে নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে। এ কারণে নীতিবিদ্যার অবধারণ হলাে মূল্যায়নমূলক অবধারণ।

উপসংহারঃ বিজ্ঞান হিসেবে নীতিবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। উপযুক্ত পর্যালােচনা সাপেক্ষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীতি হতে পারি যে, নীতিবিদ্যা বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। নীতিবিদ্যা মূলত আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের আচরণের ভালােত্ব-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, মূল্যায়ন করাই নীতিবিজ্ঞানের মূল কাজ। সুতরাং নীতিবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয় এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক