অথবা, সত্যতার সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ সত্যতা সম্পর্কীয় সমস্যা জ্ঞানবিদ্যার একটি অতিপরিচিত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। জ্ঞান বিষয়ের সত্যতা জ্ঞানের একটি অনিবার্য শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া জ্ঞানের সাথে সত্য ও মিথ্যা দুটি ধারণাই জড়িত। তাই সত্যতা যাচাই করা প্রয়ােজন।
সত্যতার সংজ্ঞাঃ সত্য বা সত্যতা সম্পর্কে এককথায় বলা সম্ভব নয়। জ্ঞানের সঙ্গে ‘সত্য অথবা ‘মিথ্যা’ সম্পর্কযুক্ত। জ্ঞান ও চিন্তার প্রকাশ ঘটে অবধারণের মাধ্যমে। সুতরাং যে জ্ঞান অবধারণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় না, তার সম্পর্কে সত্যসত্যের প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু যে জ্ঞান যুক্তিবিদ্যাসম্মত, কেবল তারই সত্যসত্য বিচারের প্রশ্ন ওঠে। সত্যের অনুসন্ধান করা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। সাধারণ অর্থে, মিল বা সামঞ্জস্যকে আমরা সত্য বলে মনে করি। এদিক থেকে সত্য দুই রকমের হতে পারে। যথা-
(১) আকারগত সত্যঃ হেতুবাক্য ওসিদ্ধান্তের সাথে যুক্তির নিয়মানুযায়ী মিল থাকলে অবধারণ বা অনুমানকে আকারগত সত্য বলা হয়।
(২) উপাদানগত সত্যঃ হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের সাথে যুক্তির নিয়মানুযায়ী মিল ছাড়াও অবধারণ বা অনুমানটির সাথে বিষয় বা ঘটনার মিল থাকলে তাকে উপাদানগত সত্য বলা হয়। অবধারণ সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। যেমন- ২+২=৪ হয়। এ অবধারণটি সত্য। কিন্তু ‘সব মানুষ হয় সৎ’-এ অবধারণটি মিথ্যা।
প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, সত্যের স্বরূপ বা প্রকৃতি এবং সত্যের মানদণ্ড এক নয়। একটি অবধারণ কেন সত্য এবং অন্যটি কেন মিথ্যা এ প্রশ্নের উত্তর থেকেই পাওয়া যাবে সত্যের যথার্থ স্বরূপ। আর কিভাবে আমরা জানি যে, একটি অবধারণ সত্য এবং অন্যটি মিথ্যা, এর উত্তর থেকে পাওয়া যাবে সত্যের মানদণ্ড পরীক্ষা।
সত্যের স্বরূপ ও মানদণ্ডের পার্থক্যের ব্যাপারে বাট্রাণ্ড রাসেল বলেন, “কোন অবধারণের সত্যতা জানা একটি আকস্মিক ঘটনা। সত্যতা বা মিথ্যাত্ব না জানলেও কোন অবধারণ সত্য আথবা মিথ্যা হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সত্যতার স্বরূপ সত্যতাকে জানার ওপর নির্ভরশীল নয়। “দুয়ে দুয়ে মিলে চার হয়”-এটি যদি সত্য হয়, তবে একে জানলে সত্য হবে, না জানলেও সত্য হবে।
পরিশেষঃ উপরিউক্ত আলােচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, সত্য বলতে ঘটনার সাথে সম্মত হওয়া, সত্তার সাথে মিল থাকা এবং বাস্তব অবস্থার অনুরূপ হওয়াকে বুঝায়।
0 মন্তব্যসমূহ