অথবা, জাতীয়তাবাদ কি?
ভূমিকাঃ বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে জাতি ও জাতীয়তাবাদ এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। জাতীয়তাবাদ বর্তমানকালে বিশ্ব রাজনীতির প্রধান পরিচালিকা শক্তি। যার ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্যায়ে ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলাে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন নতুন রাষ্ট্র গঠন করেছে।
জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাঃ একই ভৌগলিক সীমানায় বসবাসরত সমগ্র জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবােধের ওপর অন্যকোনাে ভৌগােলিক সীমারেখায় অবস্থিত মানুষের আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমতকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম পরিচালনা করার মানসিকতা হল জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ যখন কোন জনসমষ্টির মধ্যে ভাষাগত ঐক্য, সাংস্কৃতিক ঐক্য, জীবনধারণগত ঐক্য দেখা দেয় তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবােধের সৃষ্টি হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্নভাবে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযােগ্য কয়েকজনের সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলাে-
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জে. এইচ হায়েস (J. H. Hayes) তার Essay on Nationalism গ্রন্থে বলেন, জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম-এ দুই আধুনিক অনাসক্ত বিষয়ের এক আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতিরঞ্জিতকরণ।
আরনল্ড জে. টয়েনবি বলেন, Nationalism is nothing material or mechanical, but a subjective, psychological feeling in a living people'' অর্থাৎজাতীয়তাবাদ কোনােরূপ বস্তুগত বা যান্ত্রিক কিছু নয়, বরং তা জীবন্ত মানুষের এক আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি।
অধ্যাপক, লাস্কির (Laski) -এর মতে, জাতীয়তাবাদ সাধারণভাবে মানসিক ব্যাপার, যারা এর অংশীদার, এ ঐক্যবােধ তাদেরকে বাকি মানবসমাজ থেকে স্বতন্ত্ররূপে চিহ্নিত করে।
অধ্যাপক ম্যাকাইভার (Maclver)-বলেন, “জাতীয়তাবাদ হলাে ঐতিহাসিক পরিস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট আধ্যাত্ম চেতনা সংবলিত জনসমষ্টির সম্প্রদায়গত মনােভাব, যারা নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র শাসনতন্ত্র রচনা করে একত্রে বসবাস করতে চায়।”
অধ্যাপক লয়েড (Lloyd) বলেছেন, “জাতীয়তাবাদকে একটি ধর্ম হিসেবে অভিহিত করা যায়, কারণ এর উৎস মানুষের গৃঢ়তম প্রবৃত্তির মধ্যে নিহিত আছে।” Nationalism is the religion of the modern world.';
পরিশেষঃ উপযুক্ত সংজ্ঞাগুলাে আলােচনা করে আমরা বলতে পারি যে, জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক চেতনা। এটা এক প্রকার মানবিক প্রবৃত্তি ও ভাবপ্রবণতা। এটা একত্রিত হবার ও একত্রে বসবাস করার মানবিক প্রবণতা।
0 মন্তব্যসমূহ