রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক সংক্ষেপে বর্ণনা কর


প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব। প্রতিনিয়ত উক্ত সমাজের বিবর্তন ঘটেছে ও ঘটবে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কারণে মানুষ কতগুলাে নিয়ম-কানুন মেনে চলে। এই সমস্ত নিয়ম-কানুনের এক বিশেষ প্রকাশ হলাে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাদি এবং মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চরম অভিব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রশক্তি। তাই যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের তত্ত্ব, সংগঠন, শাসনপ্রণালী ও অন্যান্য কার্যাবলী নিয়ে আলােচনা করে, তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলা হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের দুটি শাখা। উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত গভীর ও পারস্পরিক নির্ভরশীরতার সম্পর্ক বিদ্যমান। নিম্নে তাদের সম্পর্ক বর্ননা করা হলাে-

(১) উৎপত্তিগত সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের দু’টি শাখা এবং উভয়ই এক অখণ্ড সত্তা থেকে উদ্গত। জর্জ নিমসন বলেন, সামাজিক বিজ্ঞানগুলি এক অখণ্ড সত্তা এবং এই অখণ্ডতা অকৃত্রিম।

(২) উভয়ের বিষয়বস্তুগত সম্পর্কঃ ইতিহাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিপ্লব, স্বাধিকার আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ইত্যাদির ইতিহাসের কথা বলা যায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাষ্ট্র ও সরকার এবং তৎসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়াদির আলােচনায় এসব বিষয়ের যথার্থ মূল্যায়ন করে থাকে।

(৩) একে অপরকে পূর্ণতা দানকারীঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রতত্ত্ব নির্মাণের সময় ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রতত্ত্বের কাঠামাে নির্মাণ করেন। আবার ইতিহাসবিদগণ ইতিহাস রচনার সময় রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের অতীত অবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাহায্য নেন। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস একে অপরকে পূর্ণতা দানকারী।

(৪) ইতিহাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপাদানঃ ইতিহাসের আলােচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। লর্ড এ্যাকটন মনে করেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি সামাজিক বিজ্ঞান যার উপাদানসমূহ ইতিহাসের স্রোতধারায় বালুকণাসমূহের মধ্যে স্বর্ণরেণুর মত জমে ওঠেছে।

(৫) একই উদ্দেশ্যঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস উভয়ের উদ্দেশ্য এক। উভয়েই চায় পাঠ ও গভীর অধ্যয়ন নিশ্চিত করে নাগরিককে সচেতন করে গড়ে তুলতে। উভয়ই এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গবেষণা, অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ কার্য চালিয়ে যায়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস দু’টি পৃথক সামাজিক বিজ্ঞান। তাদের প্রত্যেকের আলােচনার ক্ষেত্র আলাদা। তবুও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ে আলােচনায় দেখা যায়, তাদের উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক