দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলােচনা কর


প্রশ্নঃ দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলােচনা কর।
অথবা, দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কী?

ভূমিকাঃ দর্শন কথাটির বস্তুগত অর্থ দেখা। দার্শনিকদের কাছে এর অর্থ 'তত্ত্ব দর্শন’ বা বস্তুর প্রকৃত স্বরূপের উপলব্ধি। ‘দর্শন' কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ফিলােসফি'। এর অর্থ হলাে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। ধাতুগত অর্থ বিভিন্ন হলেও বিষয়বস্তুর সাদৃশ্যের কারণে ‘ফিলােসফি' শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা ‘দর্শন’ শব্দকে ব্যবহার করে থাকি।

বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সম্পর্কঃ দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। নিম্নে বিজ্ঞানের সার্থে দর্শনের সম্পর্ক তুলে ধরা হলাে-

দর্শন ও বিজ্ঞানের সাদৃশ্যঃ দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়ের লক্ষ্য জগৎ ও জীবনের রহস্য উদঘাটন করা, জটিল বিষয়কে সহজ করা, দুর্বোধ্য বিষয়কে বােধগম্য করা এবং অজানা বিষয়কে জানার গণ্ডির মধ্যে নিয়ে আসা। উভয়ের মতানুসারে জ্ঞান সুসংহত, সুসংবদ্ধ এবং সুবিন্যস্ত হলেই তা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের স্তরে উন্নীত হয়। আবার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সুবিন্যস্ত হলে তা দর্শনের স্তরে পৌঁছায়।

দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়ের মূলে রয়েছে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ এবং সত্য অনুসন্ধানের ইচ্ছা। এ সম্পর্কে মেনসন বলেন, “দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য একই।”

কানিংহাম বলেন, “সাধারণ জ্ঞান হতে বিজ্ঞানে আসতে হলে আমরা যেমন কোনাে নতুন রাজ্যে প্রবেশ করি না, অনুরূপভাবে বিজ্ঞান থেকে দর্শনে আসতে হলে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার জগৎকে ছাড়িয়ে যাই না।”

দর্শন ও বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যঃ দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে নিম্নলিখিত বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়-

(১) বিজ্ঞান প্রকৃতির এক একটি বিশেষ বিভাগ নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব জগতই দর্শনের আলােচ্য বিষয়। বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে খণ্ড খন্ড, কিন্তু দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে অখণ্ড।

(২) বিজ্ঞান তার আলােচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য কতগুলাে স্বতঃসিদ্ধ সত্য ও নীতিকে বিনা বিচারে স্বীকার করে নেয়। কিন্তু দর্শন আগে থেকে কোনাে নীতি বা সত্যকে বিনা বিচারে মেনে নেয় না, বরং বিজ্ঞানের স্বতঃসিদ্ধ সত্য বা বিনা বিচারের প্রকৃত নীতিগুলোর যথার্থ বিচারে সচেষ্ট হয়।

(৩) বিজ্ঞান ও দর্শনের পদ্ধতির মধ্যেও পার্থক্য আছে। বিজ্ঞানীদের পদ্ধতি হলাে- অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং আরােহণ ভিত্তিক পদ্ধতি। অন্যদিকে দার্শনিকদের পদ্ধতি হলাে বুদ্ধির সাহায্যে আলােচ্য বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ করা।

(৪) বিজ্ঞানের নির্ণীত বিষয়বস্তু অমূর্ত, কিন্তু দর্শনের বিষয়বস্তু হলাে মূর্ত।

(৫) বিজ্ঞান কেবল সত্যের সাধক। দর্শন হলাে সত্য, শিব ও সুন্দরের সাধক।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, দর্শন ও বিজ্ঞান পরস্পর নির্ভরশীল। প্রফেসর ওয়েবার যথার্থই বলেছেন, “দর্শন ছাড়া বিজ্ঞানগুলাে হলাে ঐক্য ছাড়া সমষ্টিমাত্র কিংবা আত্মাহীন দেহ মাত্র। অন্যদিকে বিজ্ঞান ছাড়া দর্শন হলাে দেহহীন আত্মা, নিছক কবিতা এবং মূলত স্বপ্ন থেকে এর পার্থক্য বিশেষ কিছু নয়।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক