অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের জীবন ও সমাজ গতিশীল। সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কারণে মানুষ কতগুলাে নিয়ম মেনে চলে। এসব নিয়ম-কানুনের এক উন্নত প্রকাশ হলাে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি। অন্যদিকে মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চরম অভিব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রশক্তি। আর এই রাষ্ট্রশক্তি সর্বদা একটি নৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে নীতিবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞান উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের দু’টি শাখা। উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। নিম্নে উভয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
(১) পরিচয়গত সম্পর্কঃ অধ্যাপক E. M, White বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলাে মানুষের জ্ঞানবিজ্ঞানের সেই শাখা যা রাষ্ট্রীয় জীবনের যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে আলােচনা করে। আর নীতিবিজ্ঞানের মতে, নীতিবিজ্ঞান হলাে এমন এক শাস্ত্র যা মানুষের ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, উন্নত-অনুন্নত প্রভৃতি দিক নিয়ে আলােচনা করে।
(২) উভয়ের উদ্দেশ্যঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হলাে রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। নীতিবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, উক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসরত মানুষের নৈতিক মান উন্নত করা। অর্থাৎ নীতিবিজ্ঞান উত্তম আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। তাই উভয়ের মধ্যকার উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক খুবই গভীর।
(৩) বিষয়বস্তুঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলাে রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়াদি, রাষ্ট্রের মানুষ ও তাদের রাষ্ট্রীয় জীবন। আর নীতিবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয় হলাে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ভালাে-মন্দ নিয়ে। নীতিবিজ্ঞান ব্যাপক আলােচনা করে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে আলাদা নয় বিধায় উভয় বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক খুবই গভীর।
(৪) উভয়ের শিক্ষাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়াদি শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বুদ্ধি, আত্মসংযম, প্রজ্ঞা, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকে। নীতিবিজ্ঞান নৈতিক মানসম্পন্ন মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে মানুষকে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, সহনশীলতা, পরােপকার ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদান করে। সুতরাং উভয়ের শিক্ষা কার্যক্রম কাছাকাছি।
(৫) পরস্পর নির্ভরশীলতাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞান একে অপরের ওপর পরস্পর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ও নীতিবিজ্ঞানীগণ তাদের নিজ নিজ বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্যের অনুসন্ধানের জন্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং উদ্দেশ্যগত দিক ও অন্যান্য দিক থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্রের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞানের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিবিজ্ঞান উভয়ই মানবকল্যাণে ব্রতী দু’টি শাস্ত্র। উভয়ের উদ্দেশ্য মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণসাধন করা এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। একটি ছাড়া অপরটিকে কল্পনাও করা যায় না।
0 মন্তব্যসমূহ