প্রাচীন মিশরীয়দের বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ব্যবস্থার বিবরণ দাও


প্রশ্নঃ বিজ্ঞান ও ধর্মের ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়দের অবদান আলােচনা কর।
অথবা, প্রাচীন মিশরীয়দের বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ব্যবস্থার বিবরণ দাও।

ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানব জাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এতাে বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মতাে আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃত হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য সাধারণ গুরুত্বের দাবিদার। সভ্যতার প্রতিটি শাখায় যেমন- সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন মিশরীয়গণ এক অভূতপূর্ব অবদান রাখেন।

বিজ্ঞান ও ধর্মের ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়দের অবদানঃ বিজ্ঞান ও ধর্মের ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়দের অবদান অনেক। নিম্নে সভ্যতার বিকাশে প্রাচীন মিশরীয়দের বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলাে বর্ণনা করা হলাে-

প্রাচীন মিশরীয় বিজ্ঞানঃ সভ্যতার বিকাশে মিশরীয় বিজ্ঞান যে অবদান রেখেছিল তা নিম্নে আলােচনা করা হলাে-

(১) জ্যোতির্বিজ্ঞানঃ কৃষি নির্ভর অর্থনীতির প্রয়ােজনে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রাচীন মিশরীয়রা জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করেছিল। এ কারণেই প্রাচীন মিশরে জ্যোতির্বিদ্যা বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিল। ফলে তাদের হাত ধরেই বিশ্বে প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটেছিল।

(২) গণিতশাস্ত্রঃ গণিতশাস্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়রা যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছিল। বস্তুত নীলনদের অধিবাসী প্রাচীন মিশরীয়দের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। আর যারা কৃষিকাজ করতাে, তাদের বিভিন্ন ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করতে হতাে। এভাবেই তারা গণিতশাস্ত্রের উপর প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করেছিল।

(৩) চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ প্রাচীন মিশরীয়রা ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তবে প্রথমদিকে মিশরের চিকিৎসা সংক্রান্ত ধারণা অনেকটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। এ সময় চিকিৎসাবিদ্যা ছিল ধর্ম ও যাদুবিদ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ধীরে ধীরে তা বিজ্ঞানসম্মত রূপ লাভ করে। তৃতীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ফারাও জোসারের উজির ইমহােটেস ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি একাধারে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও স্থপতি ছিলেন। চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন বলে পরবর্তীকালে তাকে দেবতা জ্ঞান করে অনেকে পূজা করতে থাকে।

(৪) রসায়নশাস্ত্রঃ মৃতদেহকে সতেজ রাখতে গিয়ে মিশরীয়রা বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা রসায়নবিদ্যাতেও যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেছিল। মৃত্যুর পর প্রথমে তারা মানুষের নাড়ি-ভুড়ি বের করে ফেলতাে। অতঃপর মৃতদেহটিকে চল্লিশ দিন পর্যন্ত একটি কাঁচপাত্রের ওষুধের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতাে।

ধর্মীয় জীবনঃ প্রাচীন মিশরীয়গণের জীবনে ধর্মের প্রভাব ছিল খুবই প্রকট। গ্রিকগণ তাদের মানবজাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধর্মপ্রাণ বলে অভিহিত করেন। ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে তাদের পৃথক করেছে। ধর্মীয় শাসন বা শুধুমাত্র পুরােহিততন্ত্রই নয়- সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বিশেষ করে তাদের সাংস্কৃতিক জীবনে ধর্মের অনুশাসনের প্রতিফলন দেখা যায়। নিম্নে তাদের ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট সমূহ আলোচনা করা হলো-

(১) আমনরে ও ওসিরিসঃ প্রাচীন জাতিসমূহের মধ্যে মিশরীয়গণই প্রথম ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রচলন করে। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল আমনরে। কৃষিভিত্তিক ও নীলনদের ওপর নির্ভরশীল মিশরীয় সভ্যতার অপর একজন দেবতার নাম ওসিরিস। তাকে নীলনদের দেবতাও বলা হয়। কথিত আছে যে, ওসিরিস তার ভ্রাতা কর্তৃক নিহত ও তার দেহ খণ্ড-বিখণ্ড অবস্থায় নীলনদে নিক্ষিপ্ত হলে তার পত্নী আইসিস সেগুলি সংগ্রহ করে জোড়া দেন। এর ফলে ওরিসিস নীলনদের দেবতা হয়ে ওঠেন।

(২) একেশ্বরবাদের ধারণাঃ মিশরীয় সাম্রাজ্যের যুগে পুরােহিততন্ত্র যখন চরম স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিল এবং ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আঘাত হানল তখন চতুর্থ আমেনহােটেপের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। তার হাত ধরে মিশরীয় সভ্যতায় একেশ্বরবাদী ধারণার বিকাশ ঘটে।

পরিশেষঃ উপরোক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, মিশরীয় সভ্যতা মানব সভ্যতার প্রধানতম পথিকৃত। এ সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল বিশ্বব্যাপী। ইউরােপ তথা সমগ্র বিশ্ব যখন বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখনই আলাের দিশারী হিসেবে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক