কেস স্টাডি (Case study) পদ্ধতি কী? কেস স্টাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ আলােচনা কর


প্রশ্নঃ কেস স্টাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ আলােচনা কর।
অথবা, কেস স্টাডি পদ্ধতির ধাপসমুহের বর্ণনা দাও।
অথবা, কেস স্টাডি (Case study) পদ্ধতি কী? কেস স্টাডি পদ্ধতির ধাপসমুহ তুলে ধর।

ভূমিকাঃ পদ্ধতিগত প্রশ্ন সমাজবিজ্ঞানে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজবিজ্ঞান গবেষণার জন্য কতগুলাে পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলাে কেস স্টাডি। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞানের 'Micro-analysis'-এর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত হচ্ছে। কোনাে নির্দিষ্ট এককের বিভিন্ন দিকের অসংখ্য চলক (Variable) সম্পর্কে সুগভীর ও সুবিস্তত অনুসন্ধান করাই হলাে Case study-এর প্রাথমিক কাজ।

কেস স্টাডির ধাপসমূহঃ আধুনিককালে কেস স্টাডি পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মৌলিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এ প্রসঙ্গে George A Lundburg উল্লেখ করেছেন, কেস স্টাডি পদ্ধতি আদৌ কোনাে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয় বরং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। কিন্তু বর্তমান কালে এ পদ্ধতি বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয় বলে এর সর্বক্ষেত্রে যথাসম্ভব বিজ্ঞানসম্মত মান বজায় রাখতে চেষ্টা করা হয়। সে কারণে বর্তমানে কেস স্টাডি নির্দিষ্ট নকশা বা পরিকল্পনা ভিত্তিক হয়ে ওঠেছে। উপরন্তু এ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা এবং পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়াতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা হয়।

কেসস্টাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ নিম্নে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলাে-


সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কাজ করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে যেসমস্ত সাধারণ ধাপ অনুসরণ করা হয় তা নিম্নে তুলে ধরা হলােঃ

প্রয়ােজনীয় কেস নির্বাচনঃ কেস স্টাডির কাজ শুরু হয় সমস্যা বা বিষয় নির্বাচন করে নয়; বরং উপযুক্ত কেস নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, যা গবেষকের নির্দিষ্ট সমস্যার দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুমিত। এ সমস্ত প্রাসঙ্গিক কেস আসলে এক একটি একক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব এককের প্রাসঙ্গিক সকল দিক বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সমস্যার গভীরতা ও বিস্তৃতি পরিমাপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, দারিদ্র্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক কোনাে গবেষক একটি গ্রাম নির্বাচন করে তার সার্বিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে পারেন।

সাময়িক প্রকল্প গঠনঃ কেস স্টাডিতে সঠিক তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এমন কিছু প্রকল্প গঠন করে কাজ করা হয় যা সম্পূর্ণ সাময়িক এবং কেবল গবেষকের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে সহায়ক। কেননা এ ধরনের প্রকল্পের পথ নির্দেশনা ছাড়া এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাসংগিক ও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহের উৎস ও মাধ্যম নির্ধারণঃ কেস স্টাডিতে সাধারণত একাধিক সূত্র হতে, বিভিন্ন উপকরণ বা মাধ্যম ব্যবহার করে প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্যের উৎস প্রধানত দু’টি। যথা:

(ক) প্রত্যক্ষ উৎস, যেমনঃ এককের বক্তব্য, এককের অবস্থা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি।
(খ) পরােক্ষ উৎস, যেমন ডকুমেন্ট, রেকর্ড, সাহিত্য, ব্যক্তিগত লেখা ইত্যাদি।

পাশাপাশি যেসব উপকরণ তথ্য সংগ্রহকল্পে ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, পরীক্ষা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম যেমন চেকলিস্ট, গাইড ইত্যাদি। কেস স্টাডির এ পর্যায়ে তথ্যের যথার্থতা ও নির্ভরযােগ্যতা বৃদ্ধির প্রয়ােজনে উৎস ও উপকরণ নির্বাচন যথেষ্ট সতর্কতা ও দক্ষতার সাথে করা প্রয়ােজন। তাছাড়া বিভিন্ন মূল্যবােধের প্রভাব মুক্ত হওয়া ও পক্ষপাতদুষ্টতা রােধের সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টাই এখানে করা বাঞ্ছনীয়।

তথ্য সংগ্রহঃ এ পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস হতে একাধিক উপকরণ ব্যবহার করে গ্রহণযােগ্য তথ্য সংগ্রহের বেলায় গবেষক বা তার নিয়ােজিত তথ্য সংগ্রহকারীদের কেস স্টাডির উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি, তথ্য সংগ্রহের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া তথ্য সংগ্রহকালে সতর্ক তত্ত্বাবধান ও ক্রস চেকিং-এর ব্যবস্থা রাখা হয়।

তথ্য বিশ্লেষণঃ মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত তথ্যাবলি সংখ্যাতাত্ত্বিক উপায়ে বিশ্লেষণ উপযােগী করে গবেষকের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সেগুলােকে উপস্থাপন করা হয়।

সমাধান দান ও ফলাে আপঃ কেস স্টাডি ক্লিনিক্যাল প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এবং গবেষণা কৌশল হিসেবে গৌণরূপে বিবেচিত হতে পারে। এ কারণে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল প্রয়ােজনে পরিচালিত কেস স্টাডি সংশ্লিষ্ট কেসের একটি সমস্যা প্রস্তাবনা ও পরবর্তীতে তার অবস্থা ফলাে আপের চেষ্টা করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, কেস স্টাডি পদ্ধতিতে Micro-level-এ গবেষণা করার সুযােগ ঘটে। অনেক সময়ই বৃহৎ সমাজ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে গবেষণা করা সম্ভবপর হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে কেস স্টাডির মাধ্যমে বৃহৎ সমাজের একটি প্রতিনিধিত্বশীল অংশকে গবেষণা করা হয়। যদিও George A. Lundberg এটাকে গবেষণা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা না করে গবেষণার একটি কৌশল বলেছেন, তারপরও Case study-এর মাধ্যমে বৃহৎ সমাজ সম্পর্কে একটা ধারণা অর্জন করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক