ইতিহাস পাঠের প্রয়ােজনীয়তা বর্ণনা কর


প্রশ্নঃ ইতিহাস পাঠের প্রয়ােজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, ইতিহাস পাঠে• প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ ইতিহাস হলাে মানবসভ্যতার দর্পণস্বরূপ। কোনাে ঘটনার নিরন্তর সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা হলো ইতিহাস। ইতিহাসের ষয়বস্তু হচ্ছে মানুষ, তার পারিপার্শ্বিকতা এবং সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ, পরিবর্তন ও পতন। এক কথায় মানুষের সাফল্য ও ব্যর্থতার বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানই ইতিহাসের মূল আলােচ্য বিষয়। এ ছাড়া ইতিহাস পাঠে মানবসভ্যতার প্রধান প্রধান স্তর, সভ্যতার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের কথা জানা যায়। ইতিহাস আমাদেরকে অতীত সম্পর্কে জ্ঞান দান করে, যার অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানে সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে পারি।

ইতিহাস পাঠের প্রয়ােজনীয়তাঃ নিচে মানবজীবনে ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করা হলােঃ

(১) অতীতকে জানাঃ ইতিহাস অতীত জীবনের যাবতীয় ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। তাই ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীত ঘটনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে পারি। ফলে মানবজীবন সুন্দর ও সঠিক বিকাশে ইতিহাস সহায়তা করে।

(২) সুষ্ঠু জ্ঞান লাভঃ ইতিহাস মানবসভ্যতার দর্পণ স্বরূপইতিহাস পাঠ করে আমরা মানবসমাজের অতীত জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারি।

(৩) সমাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণাঃ ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা মানবসমাজের শুরু থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ড, চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রার অগ্রগতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারি। কেননা ইতিহাসের প্রধান উপজীব্য বিষয় হলাে মানবসমাজের অগ্রগতির ধারা বর্ণনা।

(৪) জীবনের কার্যাবলি পরিমাপঃ ইতিহাস হচ্ছে মানবজীবনের দর্পণ ও কার্যাবলির পরিমাপক। এটি চলমান গতিধারায় জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং যুগ-যুগান্তরব্যাপী এর ক্রিয়াকর্মের মূল্যায়ন করে থাকে। কেবলমাত্র এ দর্পণের মাধ্যমেই একটি জাতি স্বীয় জীবনের কার্যাবলি পরিমাপ করতে পারে।

(৫) সমকালের চিন্তায় অতীতের প্রকাশঃ অতীত সম্পর্কে সমকালের চিন্তাই ইতিহাস ইতিহাস অতীত সম্পর্কে সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। ইতিহাস অতীতের ঘটনাবলিকে সমকালের চিন্তা-চেতনার সাথে তুলনা করতে শেখায়। ফলে সমকালের চিন্তা-চেতনায় অতীত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

(৬) অসৎ ও মন্দ কার্যাবলি পরিহারঃ ঐতিহাসিক বারানীর মতে, ভাল ও সৎ জীবনযাপনে প্রয়াসী প্রত্যেক ব্যক্তির ইতিহাস অধ্যয়ন করা আবশ্যক। ইতিহাস পাঠে মানুষ অসৎ, মন্দ ও ঘৃণিত কার্যাবলির ব্যাপারে সাবধান হতে পারে এবং সেগুলাে এড়িয়ে চলা তার পক্ষে সম্ভবপর হয়।

(৭) নিজের বিচারবুদ্ধি জোরদারঃ ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে অপরের অভিজ্ঞতার আলােকে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ যুক্তি ও বিচার-বুদ্ধিকে জোরদার করতে পারে। অনুরূপ পরিস্থিতিতে তাদের পূর্ববর্তীরা কী পন্থা অবলম্বন করেছিল সে পন্থা অবলম্বন করে সহজেই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যায়।

(৮) সভ্যতার স্তর সম্পর্কে ধারণাঃ যুগে যুগে মানুষের প্রয়ােজনে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য সভ্যতা, আবার কালের গর্ভে তা হারিয়ে গেছে এক সময়। কিন্তু তার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাস। ইতিহাস থেকে সভ্যতার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের প্রধান প্রধান স্তর সম্পর্কে জানা যায়।

(৯) জাতীয় চেতনার উন্মেষঃ ইতিহাস পাঠ জাতীয় চেতনা উন্মেষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি জাতির অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবান্বিত ইতিহাস ঐ জাতিকে বর্তমানের মর্যাদাপূর্ণ কর্মতৎপরতায় উজ্জীবিত করতে পারে।

(১০) জাতীয়তাবােধ সৃষ্টিঃ জাতীয় পরিচয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতীয়তাবােধ গড়ে ওঠে যা দেশ ও সমাজের উন্নতি তথা দেশপ্রেমের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

(১১) ঐতিহ্য ও মূল্যবোেধ সংরক্ষণঃ মানবসভ্যতা বিকাশের প্রধান মাধ্যম হলাে সংস্কৃতি। ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীত মানবসমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারি। কেননা ইতিহাস একটি জাতির ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবােধকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে থাকে।

(১২) গবেষণার উপাদানঃ বর্তমানে ইতিহাস গবেষণার উপাদান হিসেবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সামরিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসকসহ সমাজে গবেষকদের নিকট ইতিহাস খুবই মূল্যবান বিষয়।

পরিশেষঃ আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ইতিহাস হলাে অতীত ঘটনাবলির বাস্তব রূপায়ন। এর বিষয়বস্তু মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। অতএব অজানাকে জানা, অনুসন্ধান করা, গবেষণা ও প্রচেষ্টা দ্বারা আবিষ্কার ও উৎঘাটন হলাে ইতিহাস। তাই যেকোনাে সভ্যসমাজে ইতিহাস পাঠের উপযােগিতা অপরিসীম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক