বার্গাসোঁর সংজ্ঞাবাদ কী? বার্গাসোঁর সংজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ বার্গাসোঁর সংজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বার্গাসোঁর সংজ্ঞাবাদ কী?

ভূমিকাঃ হেনরি বার্গসোঁ (১৮৫৯-১৯৪১) বিগত শতকের ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। শুধু ফ্রান্সেই নয়, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তার দর্শন সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে। হেনরি বার্গসে পারিবারিক দিক থেকে ছিলেন ইহুদী ধর্মের অনুসারী। শিক্ষা জীবনের প্রথমেই গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং এ সময়ে তিনবার, উইন ও স্পেন্সরীয় জড়বাদ ও যান্ত্রিকতাবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকটা ধর্মবিদ্বেষী এবং জড়বাদী হয়ে ওঠেন। বার্গসের দর্শনে সবচেয়ে বড় অবদান হলাে সৃজনমূলক বিবর্তনবাদ।

স্বজ্ঞার প্রকৃতিঃ বুদ্ধিবাদীরা বলেন, বুদ্ধিই হলাে সত্যকে জানার একমাত্র উপায়, অপরদিকে অভিজ্ঞতাবাদীরা বলেন, অভিজ্ঞতাই হলাে সত্যকে জানার একমাত্র যন্ত্রবিশেষ। যেহেতু বার্গসো ছিলেন স্বজ্ঞাবাদী দার্শনিক সেহেতু তিনি এ অভিমত পােষণ করেন যে, পূর্ণাঙ্গ সত্যকে জানতে হলে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা কোনােটাই সঠিক হাতিয়ার নয়। তিনি বলেন যে, স্বজ্ঞা দ্বারা সত্যের সন্ধান লাভ করা যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক দার্শনিকই বুদ্ধির সাহায্যে দর্শন রচনার প্রয়াস পেয়েছেন। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। দর্শন আলোচনায় বুদ্ধির অক্ষমতার যথেষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়। বুদ্ধি বস্তুসমূহের ব্যবহারিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হলেও অতীন্দ্রিয় সত্তার স্বরূপ নির্ণয় করতে পারে না। বুদ্ধি ও বােধি হলাে বিশ্বজগৎকে জানবার দুটি ভিন্ন পথ। বার্গসোঁর মতে বুদ্ধি হলাে স্বজ্ঞার নিচে, স্বজ্ঞা বুদ্ধির ঊর্ধ্বে। বুদ্ধি স্বজ্ঞার নাগাল পায় না। এখন প্রশ্ন হলাে, স্বজ্ঞা কী? এর উত্তরে বলা যায়, স্বজ্ঞা হচ্ছে এক প্রকার শক্তি, যার দ্বারা বিচার-বুদ্ধির সহায়তা না নিয়ে একটি বস্তুকে সােজাসুজি মন দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায়। এ হলাে সাক্ষাত প্রতীতি। ফরাসি দার্শনিক হেনরি বার্গসোঁ স্বজ্ঞাকেই দার্শনিক পদ্ধতি বলে গণ্য করেন।

বার্গাসার সাথে আমার নিজস্ব মতামত কী? উত্তরে বলা যায়, বার্গসের সাথে আমি একমত। কারণ দার্শনিক পদ্ধতি হিসেবে তিনি স্বজ্ঞার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও অধিবিদ্যার অধিকাংশই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে স্বজ্ঞার কল্যাণে। সাধারণ বিজ্ঞানী যেখানে বুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল সত্যিকারের প্রজ্ঞা ও মেধাবী ব্যক্তি সেখানে বিজ্ঞানের সমস্যাবলিকে উপলব্ধি করেন স্বজ্ঞা ও চেতনার সাহায্যে। এভাবেই তিনি এগিয়ে নেন সভ্যতাকে। সুতরাং স্বজ্ঞাই যথার্থ বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও যথার্থ দর্শনের উৎস। স্বজ্ঞায় খুঁজে পাওয়া যায় দর্শন ও অধিবিদ্যার এক অভিন্ন যােগসূত্র। বিজ্ঞান ও অধিবিদ্যার মধ্যে সচরাচর যে বিরােধ লক্ষ্য করা যায়, স্বজ্ঞার যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যেক মতবাদের ন্যায় স্বজ্ঞাবাদেরও বিভিন্ন দিক থেকে আলােচনা-সমালােচনা আছে। কিন্তু তাই বলে এই মতবাদকে কোনােক্রমেই উপেক্ষা করা যায় না। বার্গসো এই মতবাদের মাধ্যমে সাহসী ভূমিকা দেখিয়েছেন তাই দর্শনের ইতিহাসে তার স্বজ্ঞাবাদ বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক