অথবা, “বর্তমানে উপজাতিদের সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে” আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ সমাজ পরিবর্তন বর্তমানে একটি সাধারণ আলােচনা। বিশ্বের প্রতিটি সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনের হাওয়া যে উপজাতি সমাজে পড়েনি তা নয়। বরং বিশ্বের অন্যান্য সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে উপজাতি সমাজও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। একই সাথে এ উপজাতি সমাজের প্রতি বিশ্বের যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ দৃষ্টিভঙ্গি কোনাে কোনাে উপজাতির প্রতি কম আবার কোনাে কোনাে উপজাতির প্রতি অত্যন্ত বেশি।
উপজাতিদের সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনঃ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে কিছু না কিছু উপজাতি বাস করে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। উপজাতি সমাজ সবসময় তাদের ঐতিহ্যগত এটি রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে রাখে। আর এসব উপজাতিরাই আদিবাসী বলে পরিচিত। সভ্যতার ছোঁয়ায় যখন মানুষ তার পুরাতন জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একেবারে পরিবর্তিত হচ্ছে তখনও এ আদিবাসী সমাজ তাদের সে পুরাতন আদিম রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় এবং অধিকাংশ অঞ্চলে আদিম রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে আছে। অধিকাংশ আদিবাসী সমাজ আজও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এ কারণেই তারা তাদের পুরানাে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে নি। যে জন্য তাদের মধ্যে পরিবর্তনও মন্থর।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি উপজাতি আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে মােট উপজাতির সংখ্যা ২০ লাখের মতো। সকল সময় সকল যুগেই উপজাতিরা বেশ অবহেলিত। এ অবহেলিত হওয়ার পেছনে অসহায়ক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশে দায়ী।
বর্তমানে উপজাতিদের সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি কী তা আলােচনা করতে গেলে প্রথমেই পূর্বে উপজাতিদের সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল? তা আলােচনা করা দরকার। বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি বলতে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাকেই ইঙ্গিত করে।
এক কথায় বলা যায়, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। সংখ্যাগুরু জাতিগুলাে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু জাতিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এ নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি সমালােচনাপূর্ণ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চপ। আর এ কারণেই সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার।
উপজাতিদের সম্পর্কে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির যে একেবারে পরিবর্তন আসেনি তা না এবং উপজাতিরা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। মর্যাদা পাচ্ছে। উপজাতি আন্দোলনে বিশ্ববিবেক অনেকক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হচ্ছে। উপজাতিদের বিভিন্নদেশে আদিবাসী হিসেবে মর্যাদা দানের জন্য বিশ্ব সংগঠনগুলাে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োেগ করে যাচ্ছে। উপজাতিদের এরকম মর্যাদা প্রাপ্তি তাদের প্রচেষ্টার ফসল। এর কারণ বর্তমানে উপজাতিরা বিশ্ব সভ্যতার সাথে সমান তালে পা ফেলছে। শিক্ষার হার বহুগুণে বদ্ধি করেছে। এ কারণে পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিশনারিরা এই উপজাতিদের উন্নত করার জন্য সাহায্য ও সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারও উপজাতিদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরিতে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন। উপজাতিদের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এরকম উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও উপজাতিদের মধ্যে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে তা বলা যাবে না। বরং উপজাতিরা অনেক ক্ষেত্রে আগের মতােই জীবনযাপন করছে। উপজাতিরা মূলত শিক্ষার মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে আসার চেষ্টা করছে। আর এ শিক্ষার মাধ্যমেই তাদের পরিবর্তনশীলতার গতি এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
বাংলাদেশের ন্যায় পৃথিবীর সকল দেশের উপজাতিরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে। শােষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন উপায় খুঁজছে। তাদের মৌলিক দাবি আদায়ের জন্য সােচ্চার হচ্ছে, বিভিন্ন আদিবাসী ফোরাম গঠন করছে। উপজাতিরা তাদের প্রতি শােষণ ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে যােগদান করছে। প্রশাসন যন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তরে পদার্পণ করছে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছে। এদের অনেকেই বর্তমানে নিজেদেরকে উপজাতি ভাবতে চায়না। উপজাতিরা শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা সাহিত্য, নাট্যকলা, সংগীত, নৃত্যকলা ইত্যাদি বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখছে। তারা এ সমস্ত ক্ষেত্রে অবদানের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে পরিচিত হচ্ছে। বিশ্ববাসী সহজেই তাদেরকে জানতে পারছে। ফলে তাদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীর পূর্বে যে ধারণা ছিল তাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। তাই বিশ্ববাসী তাদের দিকে সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সংস্কৃতিগত জীবন উন্নয়নের জন্য সাহায্য ও সহযােগিতা করছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপজাতি সমাজে পূর্বের তুলনায় অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উপজাতিরা তাদের পুরাতন প্রথা ছেড়ে আধুনিক বিশ্বসভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে ভাবতে শিখে গেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রসরতা তাদের সমস্ত জীবন প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আর এ.আমূল পরিবর্তনের জন্যই তারা বিশ্ববাসীর সাথে আগের চেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছে। বিশ্ববাসীও তাদের প্রতি পুরাতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে একেবারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করছে।
0 মন্তব্যসমূহ