অথবা, ইচ্ছার স্বাধীনতা কী সন্তোষজনক মতবাদ?
ভূমিকাঃ ইচ্ছার স্বাধীনতা দর্শনের একটি অন্যতম বিষয়। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে কি নেই- এ বিষয় নিয়ে রয়েছে অনেক মন্তব্য। সাধারণভাবে বলা যায় যে, স্বাধীনতা আছে বলেই মানুষ মনে করে। ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, নীতিবিজ্ঞানী, মনােবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সকল তাত্ত্বিক পুরুষ তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
স্বনিয়ন্ত্ৰণবাদঃ স্বনিয়ন্ত্রণবাদ হলাে এমন মতবাদ, যে মতবাদ অনুসারে ইচ্ছার স্বাধীনতা বলতে চরম স্বাধীনতাকে বােঝায় না। তাদের মতে, মানুষের চরিত্রই মানুষের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ পরনির্দেশ বর্জন করে স্ব-নির্দেশে পরিচালিত হওয়ার নামই স্বাধীনতা।
ইচ্ছার স্বাধীনতা বিষয়ক মতবাদ হিসেবে এতক্ষণ আমরা অদৃষ্টবাদ, নিয়ন্ত্ৰণবাদ এবং অনিয়ন্ত্ৰণবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করার চেষ্টা করেছি। এ আলােচনায় আমরা দেখেছি, দার্শনিক বিচারে এ মতবাদগুলাের কোনােটিকেই নিরঙ্কুশভাবে গ্রহণ করা যায় না। অদৃষ্টবাদ ভাগ্য বা নিয়তির দোহাই দিয়ে মানুষকে অলস হয়ে বসে থাকার শিক্ষা দেয়। অন্যদিকে নিয়ন্ত্ৰণবাদ এবং অনিয়ন্ত্ৰণবাদও এ ব্যাপারে কোনাে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। নিয়ন্ত্ৰণবাদ জগতের যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী বলে মানুষের ইচ্ছা ও কাজের স্বাধীনতাকে সমূলে প্রত্যাখ্যান করে। অনিয়ন্ত্ৰণবাদ আবার সব ধরনের নিয়ন্ত্রণকে অস্বীকার করে লাগামহীন স্বাধীনতার কথা প্রচার করে। এদিক থেকে এ দুটি মতবাদকে পরস্পরবিরােধী চরম মতবাদ বলে অতি সঙ্গতভাবেই আখ্যায়িত করা যায়।
ইচ্ছার স্বাধীনতার বিষয়ে আত্মনিয়ন্ত্ৰণবাদ নিয়ন্ত্ৰণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মধ্যে একটি অনুপম সমন্বয় বিধান করেছে। তাই আত্মনিয়ন্ত্ৰণবাদকে এ দুটি পরস্পরবিরােধী চরম মতবাদের সমন্বয়ী মতবাদ বলে আখ্যায়িত করা যায়। আত্মনিয়ন্ত্রণবাদ এ দুটি মতের গুরুত্বপূর্ণ ভালাে দিকগুলাে নিয়ে স্বাধীন ইচ্ছার ব্যাপারে একটি নতুন মতের প্রবর্তন করেছে। নিয়ন্ত্ৰণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মধ্যে সমন্বয় বিধান করে আত্মনিয়ন্ত্রণবাদ ঘােষণা করে যে মানষের ইচ্ছা ও কাজের দুটি দিক রয়েছে। এদের একটি হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ আর অপরটি হচ্ছে স্বাতন্ত্র। আত্মনিয়ন্ত্রণবাদীদের মতে আমাদের। ইচ্ছাশক্তি আমাদের চরিত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও এ নিয়ন্ত্রণ আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এতে বাইরের কোনাে শক্তি কাজ করে না। তাছাড়া বাইরের কোনাে শক্তি বা কোনাে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি যদি আমাদের কর্মধারাকে প্রভাবিতও করে, তাহলেও আত্মসচেতন জীব হিসেবে আমরা নিজেই নিজেদের কর্মকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারি। অর্থাৎ আমাদরে নিজেদের কর্মকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। অবশ্য এ ক্ষমতা, কোনাে লাগামহীনতার নির্দেশক নয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, স্বনিয়ন্ত্রণবাদ- নিয়ন্ত্ৰণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে। নিয়ন্ত্ৰণবাদ অনুসারে মানুষ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত। আবার অনিয়ন্ত্ৰণবাদ অনুসারে ইচ্ছার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু স্বনিয়ন্ত্রণবাদ এদুরের মাঝে সমন্বয় করে বিচারবাদীর ভূমিকা পালন করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ