সুমেরীয় শাসনের নব্য ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দাও


প্রশ্নঃ সুমেরীয় শাসনের নব্য ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দাও।
অথবা, সভ্যতার ইতিহাসে সুমেরীয় শাসনের নব্য ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

ভূমিকাঃ সুমেরীয় সভ্যতা মানব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা। সুমেরীয় অঞ্চলে উন বংশের নেতৃত্বে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ গড়ে ওঠে। বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিম্নে সুমেরীয় শাসনের নব্যধারা সম্পর্কে আলােকপাত করা হলাে-

(১) আইনগত কাঠামােঃ সুমেরীয় অঞ্চলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সাধারণ মানুষের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। ডুঙ্গী নামক একজন সুমেরীয় সম্রাট সুমেরীয় আইন প্রণয়ন করেন।

(২) ধর্মব্যবস্থাঃ সুমেরীয়রা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করতাে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে না পারলেও কিছু কিছু অবদান সুমেরীয় সভ্যতায় পাওয়া যায়। তাদের দেবতাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল সূর্য দেবতা শামাকা, বৃষ্টি, বাতাস ও বন্যার দেবতা এনলিন, পানির দেবতা এনকি, প্রেম ও উর্বরতার দেবতা ইনাননা এবং প্লেগ রােগের দেবতা নারগল।

(৩) সমাজ ব্যবস্থাঃ সুমেরীয় সমাজ প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। সমাজের প্রথম স্তরে অবস্থান করতাে শাসকশ্রেণি, ধর্মযাজক, অভিজাত শ্রেণি ও ধনী বণিক সম্প্রদায়। দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান করতে চিকিৎসক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তৃতীয় স্তরে অবস্থান করতাে দাস, ভূমিদাস ও শ্রমিক সম্প্রদায়। সুমেরীয় সমাজে নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা ছিল। পৈত্রিক সম্পত্তির অর্ধেক পরিমাণ নারীরা লাভ করতাে।

(৪) অর্থনৈতিক কাঠামােঃ সুমেরীয় সমাজের যে অর্থনৈতিক কাঠামাের কথা জানা যায় তা অত্যন্ত সহজ সরল। সুমেরীয়রা মূলত কৃষিকাজ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতাে। রাষ্ট্রের জমিজমা রাজার সম্পত্তি বলে বিবেচিত হতাে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কৃষিকাজ ছিল সুমেরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। কৃষিকাজের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রকম ফসল উৎপাদন করতাে।

(৫) রাজনৈতিক ব্যবস্থাঃ সুমেরীয় সভ্যতার লােকজনের জীবন ছিল শহরকেন্দ্রিক। সুমেরীয়রা বেশ কয়েকটি শহর গড়ে তােলেছিল। তাদের গড়ে তােলা শহরগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল উর, ইউরুক, লারসা, ইদু। সুমেরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তেমন ভালাে ছিল না। সুমের ছিল আক্রমণকারীদের জন্য উন্মুক্ত। ফলে সুমেরে স্থায়ী কোনাে সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। লােকজন শুধুমাত্র সামরিক কারণে একত্রিত হতাে।

(৬) সংস্কৃতিঃ সুমেরীয় অঞ্চলের মানুষ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা নিজস্ব লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। সুমের ছাড়াও তাদের এ লিখন পদ্ধতি পাশ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছিল। এই লিখন পদ্ধতির নাম ছিল কিউনিফর্ম।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সুমেরীয় শাসনব্যবস্থায় বিশেষ এক নব্যধারা সূচিত হয়েছিল যা পরবর্তীকালে অন্যান্য সভ্যতার বিকাশকে তরান্বিত করেছিল। সুমেরীয়রা অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান সগ্রহ করেছিল। আবার সুমেরীয় সংস্কৃতি থেকেও অন্যান্য সংস্কৃতিতে বিভিন্ন উপাদান প্রবেশ করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে সুমেরীয় শাসনব্যবস্থার বিশেষত্ব উপলব্ধি করা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় সুমেরীয় সভ্যতা পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক