বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ কী?


প্রশ্নঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ কী?
অথবা বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের সংজ্ঞা দাও।

ভূমিকাঃ বাস্তববাদ এমন একটি সত্তাবিষয়ক মতবাদ যে মতবাদ অনুসারে বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ বা মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্তা আছে। জ্ঞাতা কোন জ্ঞেয় বস্তুকে না দেখলে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না- একথা বলার আমাদের কোন যুক্তিসঙ্গত অধিকার নেই। সুতরাং যে মতবাদ অনুসারে জ্ঞেয় বস্তর একটি স্বাধীন সত্তা আছে, জ্ঞাতা জানুক বা না জানুক জ্ঞেয় বস্তু স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল, তাকে বাস্তববাদ বা (Realism) বলে। বাস্তববাদের ইতিহাস আলােচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, বাস্তববাদ প্রধানত চার প্রকার। যথা-
(১) সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ
(২) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ
(৩) নব্যবাস্তববাদ এবং
(৪) বিচারমূলক বাস্তববাদ

বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের পরিচয়ঃ নিম্নে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ সম্পর্কে আলােকপাত করা হলাে-

বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদঃ লৌকিক বাস্তববাদের ত্রুটি নিরসনের জন্য জন লক বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেন। তার মতে, বস্তুর গুণ দু’প্রকার, যথা- মুখ্য ও গৌণ। মুখ্য গুণগুলাে হচ্ছে বস্তুর আকার, আয়তন, সংখ্যা, ঘনত্ব ইত্যাদি, যা জড়বস্তুকে জড়বস্তু বলে চিহ্নিত করে। এ গুণগুলাে সকলের নিকট একইভাবে প্রত্যক্ষীভূত হয়। অপরপক্ষে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ প্রভৃতি গুণই মানুষের ব্যক্তিগত। এগুলাে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রূপের। এ গুলাে হচ্ছে গৌণ গুণ।

লবাের মতে, বস্তুকে আমরা সরাসরি জানতে পারি না। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা বস্তুর প্রতিলিপি বা ধারণা জেনে থাকি। সুতরাং বস্তুকে জানা যায় বস্তুর ধারণা বা প্রতীকের মাধ্যমে। বস্তুর প্রতীকের সঙ্গে বস্তুর ধারণার মিল থাকলে বস্তুর জ্ঞান সম্ভব হয়। এ মতবাদকে প্রতীকবাদও বলা হয়ে থাকে।

বাস্তববাদঃ বাস্তববাদ এমন একটি সত্তাবিষয়ক মতবাদ যে মতবাদ অনুসারে বস্তর জ্ঞাননিরপেক্ষ বা মননিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্তা আছে। জ্ঞাতা কোন জ্ঞেয় বস্তুকে না দেখলে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না— একথা বলার আমাদের কোন যুক্তিসঙ্গত অধিকার নেই। সুতরাং যে মতবাদ অনুসারে জ্ঞেয় বস্তুর একটি স্বাধীন সত্তা আছে, জ্ঞাতা জানুক না জানুক জ্ঞেয় বস্তু স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল তাকে বাস্তববাদ বলে। বাস্তববাদের ইতিহাস আলােচনা আমরা দেখতে পাই যে, বাস্তববাদ প্রধান চার প্রকার। যথা-
(১) সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ
(২) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ
(৩) নব্যবাস্তববাদ এবং
(৪) বিচারমূলক বাস্তববাদ
নিম্নে বিচারমূলক বাস্তববাদ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-

বিচারমূলক বাস্তববাদঃ বিচারমূলক বাস্তববাদ ভাববাদ ও নব্যবাস্তববাদের বিরুদ্ধে মতবাদ হিসেবে দর্শনের ইতিহাসে এসেছে। ডুরান্ট ড্রেক, লাভজয়, রন্টাজার্স, জর্জ সান্তয়ানা সি, এ স্ট্রং হচ্ছে বিচারমূলক বাস্তববাদের প্রবর্তক। এ মতবাদ অনুসারে জগৎ বস্তু-ধারণার সমন্বয়ে গঠিত। আমরা ধারণাকেই সরাসরি জানতে পারি, বস্তুকে ধারণার মাধ্যমে। পরিজ্ঞাত হই। বস্তুর জ্ঞান ধারণা হতে অনুমিত হয়। বস্তু হতে ধারণা আংশিকভাবে স্বতন্ত্র।

বিচারমূলক বাস্তববাদ অনুসারে, ইন্দ্রিয়ােপাত্তের মাধ্যমে পরােক্ষভাবে জড়বস্তুকে জানা যায়। জড়বস্তু হতে যে সংবেদন বা উপাত্ত আসে তা হলাে আমাদের বস্তুজ্ঞানের ভিত্তি। তাদের মতে, নব্যবস্তুবাদীরা অধ্যাস, অমূল, প্রত্যক্ষণ ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তারা মন হতে স্বতন্ত্র বস্তুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন কিন্তু জ্ঞানের সাহায্যে প্রমাণ করতে পারে না। পক্ষান্তরে নব্যবাস্তববাদীরা জ্ঞানের সাহায্যে বস্তুর অস্তিত্ব প্রতিপন্ন করেন। তাদের মতে, মন সরাসরি বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত হয়। তাদের মতে, বস্তুর গুণাবলি আংশিকভাবে বস্তুগত ও আংশিকভাবে ব্যক্তিগত। মানুষের জ্ঞানের তিনটি অঙ্গ। যথা-
(১) প্রত্যক্ষকারী
(২) বহির্জগতের বস্তু এবং
(৩) ইন্দ্রিয়াপাত্ত স্বভাবমিশ্র বা অন্তরসত্তা।
এগুলাে স্বভাবমিশ্র বা আন্তরসত্তা, জড় কিংবা চেতন নয়। এগুলাে যৌক্তিক মন সরাসরি স্বভাবমিশ্র বা অন্তরসত্তাকে জেনে থাকে এবং তা হতে বস্তু কল্পনা করে। এ মতানুসারে বস্তু ও জ্ঞাত পৃথক।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, প্রায় প্রতিটি দার্শনিক মত বা পদ্ধতির কিছু না কিছু ভুলত্রুটি থাকে। তাই বলে সে মতবাদটিকে আমরা দর্শনের আলােচনার গুরুত্ব থেকে বাদ দেই না। সুতরাং বাস্তববাদের মতবাদ হিসেবে বিচারমূলক বাস্তববাদের স্থান অগ্রগণ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক