অথবা, প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় জীবন আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানব জাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এতাে বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মতাে আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃত হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য সাধারণ গুরুত্বের দাবিদার।
ধর্মীয় জীবনঃ প্রাচীন মিশরীয়গণের জীবনে ধর্মের প্রভাব ছিল খুবই প্রকট। গ্রিকগণ তাদের মানবজাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধর্মপ্রাণ বলে অভিহিত করেন। ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে তাদের পৃথক করেছে। ধর্মীয় শাসন বা পুরােহিতহতন্ত্রই নয়, সামাজিক অর্থনৈতিক এবং বিশেষ করে সাংস্কৃতিক জীবনে ধর্মের অনুশাসনের প্রতিফলন দেখা যায়।
আমনরে ও ওসিরিসঃ প্রাচীন জাতিসমূহের মধ্যে মিশরীয়গণই প্রথম ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রচলন করে। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল আমনরে। কৃষিভিত্তিক ওনীলনদের ওপর নির্ভরশীল মিশরীয় সভ্যতার অপর একজন দেবতার নাম ওসিরিস। তাকে নীল নদের দেবতাও বলা হয়। কথিত আছে যে, ওসিরিস তার ভ্রাতা কর্তৃক নিহত ও তার দেহ খণ্ড-বিখণ্ড অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হলে তার পত্নী আইসিস সেগুলি সংগ্রহ করে জোড়া দেন।
একেশ্বরবাদের ধারণাঃ মিশরীয় সাম্রাজ্যের যুগে পুরােহিততন্ত্র যখন চরম স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিল এবং ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আঘাত হানল তখন চতুর্থ আমেনহােটেপের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭৫ সালে তিনি পুরােহিতদের মন্দির থেকে বহিষ্কার করে দেব-দেবীর পূজা নিষিদ্ধ ঘােষণা করেন এবং তার প্রজাদের ‘এটনম্ব’ নামে এক নতুন দেবতার পজা করতে নির্দেশ দেন। আমেনহােটেপ ইখনাটন নাম ধারণ করে ‘এটনম্ব’ বা একেশ্বরবাদের মতবাদ প্রচার করেন। একেশ্বরবাদের এই মূলমন্ত্র তিনিই প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে ৬০০ বছর পরে ইহুদীগণ এই মতবাদ পুনর্জীবিত করেন।
পরিশেষঃ আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, মিশরীয় সভ্যতা মানবসভ্যতার পথিকৃৎ ও প্রাচীন সভ্যতার শীর্ষে। মিশরীয় সভ্যতা বিশেষত রাষ্ট্র ও সমাজ, ধর্ম এবং সংস্কৃতি অনুকরণ করেনি এমন সমাজ ও সভ্যতার কথা কমই জানা যায়। এ সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল বিশ্বব্যাপী ইউরােপ তথা সমগ্র বিশ্ব যখন বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখনই আলাের দিশারী হিসেবে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটে ।
0 মন্তব্যসমূহ