অথবা, সনাতন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিসমূহ কী কী?
ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ক্ষমতার জীব। গুণ-ক্ষমতা ও যােগ্যতার প্রেক্ষিতে মানুষ বিচিত্র এবং পরস্পর নির্ভরশীল। মূলত এ কারণে মানুষ বাঞ্ছিত জীবনযাপনের প্রত্যাশায় সমাজ গঠন করে। আর এই সমাজকে সুষ্ঠু সামঞ্জস্যশীল উপায়ে পরিচালনার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, ঐক্য, সংরক্ষণ ও বিকাশধারা প্রবর্তনের জন্য গঠন করা হয় রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের সনাতন পদ্ধতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের সনাতন পদ্ধতিগুলাে আদর্শবাদী পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। এগুলাে নিম্নরূপঃ
(১) দার্শনিক পদ্ধতিঃ রাজনৈতিক আলােচনার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পদ্ধতি হলাে দার্শনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতি চিন্তামূলক পদ্ধতি। এ রীতিতে দার্শনিকগণ মানসক্ষেত্রে এমন এক বিমূর্ত রাষ্ট্রদর্শন গড়ে তােলেন; যার ভিত্তিতে তারা আদর্শ রাষ্ট্রের প্রকৃতি, আইন ও শাসনপদ্ধতি নিয়ে অভিমত প্রচার করেন। রাজনৈতিক ও দার্শনিক পর্যবেক্ষণ এবং তুলনামূলক আলােচনার মধ্যদিয়ে তারা রাজনৈতিক উপাত্তকে বিশ্লেষণ করেছেন।
(২) ঐতিহাসিক পদ্ধতিঃ ঐতিহাসিক পদ্ধতি ধ্রুপদী রাজনৈতিক তত্ত্বের অধ্যয়ন অথবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশের পরীক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত। ঐতিহাসিক পদ্ধতি মূলত বর্ণনামূলক। এই পদ্ধতি অনুসারে অতীতের উপাদান সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলির ব্যাপারে পরীক্ষাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
(৩) আইনগত পদ্ধতিঃ আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করা হয়। আইনানুগ কোনাে প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনাে বিষয়ের প্রতি এ ধারার গুরুত্বারােপ করা হয় না। আইনগত পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলাে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইনগত প্রকৃতি এবং শাসনব্যবস্থার আইনগত ভিত্তি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা। রাষ্ট্রকে একটি বৈধ ব্যক্তি মনে করে এর কার্য, কর্মক্ষেত্র, অধিকার, কর্তব্য নির্ণীত হয়। অস্টিন এ নীতির পুরােধা।
(৪) প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিঃ প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি প্রয়ােগ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমনঃ রাজনৈতিক দল, আইনসভা, বিচারবিভাগের কার্যাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। বর্তমানকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হয়।
(৫) পর্যবেক্ষণমুলক পদ্ধতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলােচনার ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্র খুবই সীমিত; কাজেই কোনাে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিই গ্রহণীয়। বিভিন্ন দেশের শাসনপদ্ধতি, এর পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারের অনুসৃত নীতির ফলাফল ইত্যাদি লক্ষ্য করে সিদ্ধান্তে আসা যায়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এই সমজকে সুষ্ঠু সামঞ্জস্যশীল উপায়ে পরিচালনার মাধ্যমে শান্তি শৃঙখলা, ঐক্য, সংরক্ষণ ও বিকাশধারা প্রবর্তনের জন্য গঠন করা হয় রাষ্ট্র। তাই সহজ কথায় বলতে গেলে, যে বিজ্ঞান রাষ্ট্র নিয়ে আলােচনা করে, তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
0 মন্তব্যসমূহ