লেনদেনের শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা কর


১.১৬ লেনদেনের শ্রেণিবিন্যাস
Classification of Transaction

প্রশ্নঃ লেনদেনের শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা কর

ভূমিকাঃ লেনদেনের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, সীমাবদ্ধতা ও ব্যবসায়ের সার্বিক প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে লেনদেনকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে লেনদেনের শ্রেণিবিন্যাস ছক আকারে উপস্থাপন করা হলােঃ

ক. উদ্দেশ্য ভিত্তিক লেনদেন (Basis of Objective): লেনদেনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে লেনদেনসমূহ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. ব্যবসায় লেনদেনঃ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যেসব লেনদেন সংঘটিত হয় তাকে ব্যবসায়িক লেনদেন বলে। যেমন: পণ্য বা সেবা ক্রয় বিক্রয়।

২. অব্যবসায়ী লেনদেনঃ যেসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত না হয়ে কেবলমাত্র জনহিতকর কাজ করার জন্য পরিচালিত হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনকে অব্যবসায়ী লেনদেন বলে। যেমনঃ মসজিদ, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লাব ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন।

৩. ব্যক্তিগত লেনদেনঃ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে যেসব লেনদেন সম্পন্ন হয় তাকে ব্যক্তিগত লেনদেন বলে। যেমনঃ মেয়ের বিয়ের খরচ, ঘরের আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি।

খ. প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেন (Basis of Instititution): প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেনগুলােকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১. আন্তঃলেনদেনঃ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সংঘটিত লেনদেনসমূহকে আন্তঃলেনদেন বলে। যেমনঃ অবচয়, অবলােপন ইত্যাদি।

২. বহিঃলেনদেনঃ অন্য কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংঘটিত লেনদেনকে বহিঃলেনদেন বলে। যেমনঃ রহিমকে ৫,০০০ টাকা পরিশােধ করা হলাে।

গ. অর্থ আদান-প্রদান ভিত্তিক (Basis of Monetary Terms): অর্থ আদান-প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১. নগদ লেনদেনঃ যেসব লেনদেন সংঘটিত হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের পরিবর্তন ঘটে, তাকে নগদ লেনদেন বলে। যেমন: ৮,০০০ টাকা কমিশন পাওয়া গেল।

২. ধারে লেনদেনঃ কোনাে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে যদি নগদে বা চেকের মাধ্যমে আদান-প্রদান না হয় তবে তাকে বাকি বা ধারে লেনদেন বলে। যেমনঃ আজাদের কাছে ৪,০০০ টাকার পণ্য সামগ্রী বাকিতে বিক্রয় করা হলাে।

৩. অ-নগদ লেনদেনঃ যে লেনদেনের ফলে নগদ অর্থের আদান-প্রদান হয় না এবং ভবিষ্যতে ও স্বাভাবিকভাবে কোন প্রকার নগদ প্রাপ্তি বা প্রদান হবে না তাকে অনগদ লেনদেন বলে।

ঘ. দৃশ্য ও অদৃশ্যমান ভিত্তিক (Basis of Visibility): দৃশ্য ও অদৃশ্যমান ভিত্তিক লেনদেনসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১. দৃশ্যমান লেনদেনঃ যেসব লেনদেন স্পর্শ করা যায়, অর্থাৎ দেখা ও ধরা যায় তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমনঃ ৪,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করা হলাে।

২. অদৃশ্যমান লেনদেনঃ যেসব লেনদেন স্পর্শ করা যায় না অর্থাৎ দেখা ও ধরা যায় না তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমনঃ স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়।

ঙ. উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেন (Basis of Utility): উপযােগিতার ভিত্তিতে লেনদেনকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১. মূলধন জাতীয় লেনদেনঃ যেসব লেনদেনের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মূলধন জাতীয় লেনদেন বলে। মূলধন জাতীয় লেনদেনের উপযােগিতা একাধিক বছর বিদ্যমান থাকে। যেমনঃ ভূমি ক্রয়, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি।

২. রাজস্ব বা মুনাফা জাতীয় লেনদেনঃ যেসব লেনদেনের স্বল্পমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মুনাফা জাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফা জাতীয় লেনদেনের উপযােগিতা একটি আর্থিক বৎসরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। যেমনঃ বেতন, ক্রয় ইত্যাদি।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, লেনদেনসমূহকে তাদের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক