“সব ঘটনাই লেনদেন নয়, কিন্তু সব লেনদেনই ঘটনা”- উক্তিটি ব্যাখ্য কর


১.১৮ সব ঘটনাই লেনদেন নয়, কিন্তু সব লেনদেনই ঘটনা
Every Event is Not a Transaction But Every Transaction is an Event

প্রশ্নঃ “সব ঘটনাই লেনদেন নয়, কিন্তু সব লেনদেনই ঘটনা”- উক্তিটি ব্যাখ্য কর

ভূমিকাঃ ঘটনার মাধ্যমে লেনদেনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সকল ঘটনাকেই লেনদেন বলা যায় না। কোন ঘটনাগুলাে লেনদেন আর কোনটি লেনদেন নয় তা বিচারের জন্য ঘটনা এবং লেনদেনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যের আলােচনা করা হলাে-

ঘটনা (Event): মানব জীবনের প্রতিটি মূহর্তে যা কিছু ঘটে তাই ঘটনা। ঘটনা আর্থিক ও অনার্থিক দুই-ই হতে পারে। এর দুটি পক্ষ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। আবার ঘটনা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যেকোনাে কিছু হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ হতে পারে আবার অসম্পূর্ণও হতে পারে।

সব ঘটনাকে লেনদেন না বলার কারণঃ নিচে সব ঘটনাকে লেনদেন না বলার কারণসমূহ উল্লেখ করা হলাে-

১. কোনাে কিছু সংঘটিত হওয়াকেই ঘটনা বলে। ঘটনা আর্থিক ও অনার্থিক হতে পারে। যেসব ঘটনার কারণে কারবারের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয় না তাকে কেবলই ঘটনা বলে।

২. শুধু আর্থিক সম্পর্কযুক্ত বর্ণনাই লেনদেন, বাকি সব ঘটনা।

৩. সব ঘটনার আর্থিক বা মানবিক মূল্য বিবেচনা করা যায় না। আর্থিক মূল্য বিবেচনা ব্যতীত ঘটনা শুধুই ঘটনা।

৪. কোনাে ঘটনা যদি অর্থের মানদণ্ডে পরিমাপযােগ্য না হয় তবে তাকে লেনদেন বলা যাবে না। যেমন: পণ্য বিনিময় করা হলাে। এটিকে লেনদেন বলা যাবে না।

৫. কোনাে ঘটনা সংঘটিত হলে দ্বৈতসত্তার পরিবর্তন সাধিত নাও হতে পারে। তাই সব ঘটনাকেই লেনদেন বলা যায় না।

৬. প্রতিটি ঘটনা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বতন্ত্র নয়। কারণ ঘটনার পরস্পর নির্ভরশীলতার কারণে তাকে লেনদেন বলা যায় না।

৭. ঘটনার ক্ষেত্রে প্রামাণ্য দলিল রাখা হয় না, কিন্তু লেনদেনে দলিল থাকা বাধ্যতামূলক। তাই সব ঘটনাই লেনদেন নয়।

লেনদেন (Transaction): লেনদেন হচ্ছে একটি ঘটনা যা অর্থের দ্বারা পরিমাপযােগ্য এবং যা কোনাে ব্যবসায়ের সম্পদ, দায়, মালিকানা স্বত্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

সব লেনদেনকে ঘটনা বলার কারণঃ নিচে সব লেনদেনকে ঘটনা বলার কারণসমূহ উল্লেখ করা হলাে—

১. কোনাে ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে অবশ্যই আর্থিক অবস্থার পরিমাণগত ও কাঠামােগত পরিবর্তন আনতে হবে।

২. লেনদেন বলতে আর্থিক মূল্য সম্পন্ন ঘটনাকে বােঝায় অর্থাৎ অর্থের মানদণ্ডে পরিমাপযােগ্য ঘটনাই কেবল লেনদেন। যেমন: ২,০০০ টাকার পণ্য ক্রয় করা হলাে।

৩. কোনাে ঘটনার ফলে দ্বৈতসত্তা তথা দুটি পক্ষের হিসাবের পরিবর্তন হয় তাকে লেনদেন বলে।

৪. সব লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বতন্ত্র ঘটনার দরকার। প্রতিটি লেনদেন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিন্তু নির্ভরশীল নয়।

৫. পণ্য দ্রব্য বা সেবার বিনিময় সংঘটিত হলে কেবল তাকে লেনদেন বলা যায়।

৬. কোনাে ঘটনা লেনদেন হতে হলে তার সমর্থনে অবশ্যই প্রামাণ্য দলিল থাকতে হবে।

৭. লেনদেন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে। যেমন: ৫০,০০০ টাকার আসবাবপত্র ক্রয় একটি দৃশ্যমান ঘটনা, কিন্তু আসবাবপত্রের অবচয় অদৃশ্যমান ঘটনা হিসেবে লেনদেন।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ঘটনা হচ্ছে লেনদেনের অভিভাবক স্বরূপ, কারণ ঘটনা থেকেই লেনদেনের জন্ম। উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলাে বিদ্যমান থাকলেই কেবল কোনাে ঘটনাকে লেনদেন বলা যায়। অর্থাৎ, সব ঘটনাই লেনদেন নয় কিন্তু সব লেনদেনই ঘটনা।

'

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক