অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে?


প্রশ্নঃ অভিজ্ঞতাবাদ বলতে কী বােঝ?
অথবা, অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে?

ভূমিকাঃ অভিজ্ঞতাবাদ একটি অন্যতম জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ। এমতানুসারে অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। আধুনিক যুগের দার্শনিক বেকন, জন লক, বার্কলি ও হিউম ছিলেন অভিজ্ঞতাবাদের প্রধান সমর্থক। এই মতবাদের প্রথম বীজ বপন করেন বেকন। তবে জন লক হচ্ছেন আধুনিক অভিজ্ঞতাবাদের জনক। এই মতবাদ অনুযায়ী একমাত্র অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের উৎস। এ ছাড়া জ্ঞানলাভের অন্য কোন উপায় নেই। নিম্নে বিভিন্ন দার্শনিকের দৃষ্টিতে অভিজ্ঞতাবাদের ব্যাখ্য দেয়া হলােঃ

জন লকের অভিজ্ঞতাবাদঃ জন লক অভিজ্ঞতাবাদের একটি সুসংহত ও সুস্পষ্ট রূপ দান করে বলেন অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তিনি বুদ্ধিবাদের প্রধান পুরােহিত ডেকার্টের অন্তরধারণাকে নিম্নোক্ত যুক্তির সাহায্যে খণ্ডন করেন।



(১) সহজাত ধারণা সকলের মনে একরূপ থাকে নাঃ মানুষের মধ্যে যদি কার্যকারণ, ঈশ্বর, অসীমতা, নিত্যতা ইত্যাদি সম্পর্কে সহজাত ধারণা থাকে, তাহলে তা সকলের মধ্যেই সমানভাবে বিরাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শিশু, নির্বোধ ও অসভ্য লােকদের মধ্যে এ জাতীয় ধারণা নেই।

(২) বাস্তবতার নিমিত্তে ধারণাঃ কোন ধারণা সকলের মধ্যে থাকলেই তাকে অন্তরধারণা বলা যায় না। আগুন সম্পর্কে সকলেরই ধারণা আছে। তবে তা অন্তরধারণা নয়। এটি অভিজ্ঞতাজাত ধারণা।

(৩) ঈশ্বর ও নৈতিক নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন মতঃ ধারণা সহজাত হলে তা সবার মধ্যেই একরূপ হবে। কিন্তু দেখা যায়, ঈশ্বর, নৈতিক নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যক্তি ও সমাজভেদে বিভিন্ন রূপ ধারণা রয়েছে।


(৪) অভিজ্ঞতার কল্যাণে ধারণাঃ কোন ধারণা সর্বজনস্বীকৃত হলেই তাকে অন্তরধারণা বলা যায় না। মানুষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই অন্তরধারণা অর্জন করে।

বার্কলির অভিজ্ঞতাবাদঃ বার্কলি তার অভিজ্ঞতাবাদের মাধ্যমে বলেন, জগতের সকল বস্তুই সংবেদন ও ধারণার সৃষ্টিমাত্র। বস্তুর কোন মননিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর। সংবেদন ও ধারণাই জ্ঞানের প্রকৃত উৎস। বার্কলি বলেন, গুণের আধার হিসেবে বস্তর অস্তিত্ব নেই; মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই। উভয় প্রকার গুণই মনের ধারণা মাত্র। তিনি কেবল মনের ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন এবং বলেন, জগতের বস্তুসমূহ মনের ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। অর্থাৎ বস্তুর অস্তিত্ব মননির্ভর।


ডেভিড হিউমের অভিজ্ঞতাবাদঃ ডেভিড হিউম একজন চরম অভিজ্ঞতাবাদী। তার মতবাদের পরিণতি হচ্ছে সংশয়বাদ। তিনি বলেন, যেহেতু দ্রব্য, আত্মা ও ঈশ্বরকে অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না, তাই এদের কোন অস্তিত্ব নেই। তার মতে, আমাদের সকল জ্ঞান আসে ইন্দ্রিয়জ এবং ধারণা থেকে। ইন্দ্রিয়জ হচ্ছে বাহ্য ও অন্তর সংবেদন। এই সংবেদন সজীব ও স্পষ্ট। এই সংবেদনের ক্ষীণ ও অস্পষ্ট মানসরূপই হচ্ছে ধারণা। ইন্দ্রিয়জ থেকেই ধারণার উৎপত্তি। যার ইন্দ্রিয়জ নেই তার ধারণাও নেই। ধারণা বিছিন্ন অবস্থায় থাকে। এই ধারণাই জ্ঞানের উপকরণ। এই ধারণাগুলাে তিনটি অনুষঙ্গ নিয়মানুসারে (তথা সান্নিধ্য নিয়ম সাদশ্য নিয়ম ও পারম্পর্য নিয়ম) সংযুক্ত হলে জ্ঞানের উৎপত্তি হয়। তবে কোন জ্ঞানই সুনিশ্চিত নয়, সব জ্ঞানই সম্ভাব্য।


পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়,আধুনিক যুগের দার্শনিক বেকন, জন লক, বার্কলি ও হিউম ছিলেন অভিজ্ঞতাবাদের প্রধান সমর্থক। এই মতবাদের প্রথম বীজ বপন করেন বেকন। তবে জন লক হচ্ছেন আধুনিক অভিজ্ঞতাবাদের জনক। এই মতবাদ অনুযায়ী একমাত্র অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের উৎস। এ ছাড়া জ্ঞানলাভের অন্য কোন উপায় নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক