লেনদেন চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ কর


১.১৯ লেনদেন চিহ্নিতকরণ
Transaction Identification

প্রশ্নঃ লেনদেন চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ কর

উত্তরঃ ব্যবসায়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সব ঘটনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় না। অন্যদিকে যেসব ঘটনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য তার সবগুলােই আবার ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাই ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত আর্থিক ঘটনাগুলাে সাধারণত দুটি উপায়ে চিহ্নিত করা যায়-

১. সনাতন পদ্ধতি; এবং
২. সমীকরণ পদ্ধতি (আধুনিক)

সনাতন ও সমীকরণ উভয় পদ্ধতি প্রয়ােগের সময় পূর্ববর্তী পাঠে আলােচিত লেনদেনের কতিপয় প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আলােকে ব্যবসায়ে সংঘটিত ঘটনাগুলাে থেকে লেনদেনগুলাে শনাক্ত করতে হবে।

১ সনাতন পদ্ধতিতে লেনদেন চিহ্নিতকরণ (Transaction Identification under Traditional Method): ব্যবসায়ে সংঘটিত ঘটনাগুলােকে লেনদেনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আলােকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে সাধারণভাবে বর্ণনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কর্মচারীকে বেতন প্রদান করা হলে একদিকে ব্যবসায়ের বেতন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং অন্যদিকে ব্যবসায়ের নগদ সম্পত্তি হ্রাস পায়। নিচে আমরা একটি বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করব।

গাণিতিক উদাহরণ-১: জনাব তৌহিদ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘তৌহিদ ট্রেডার্স' নামক একটি খুচরা ব্যবসায় আরম্ভ করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে উক্ত ব্যবসায়ে সংঘটিত ঘটনাগুলাে নিম্নরূপ-

ফেব্রুয়ারি ১ : জনাব তৌহিদ ব্যবসায়ের প্রয়ােজনে ৭০,০০০ টাকা মূলধন আনয়ন করেন।
ফেব্রুয়ারি ৬ : একটি আসবাবপত্র ক্রয়ের অর্ডার বা ফরমায়েশ প্রদান করা হলাে।
ফেব্রুয়ারি ১৫ : পণ্য ক্রয় করা হলাে ৩৫,০০০ টাকা ।
ফেব্রুয়ারি ২৩ : ধারে বিক্রয়কৃত ২,৫০০ টাকার পণ্য ক্রেতার কাছ থেকে ফেরত আসল।
ফেব্রুয়ারি ২৮ :জনাব তৌহিদ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বাসার জন্য ৫০০ টাকার বাজার করল।

উপরি-উক্ত ঘটনাগুলাের মধ্যে কোনটি লেনদেন আর কোনটি লেনদেন নয় সনাতন পদ্ধতিতে চিহ্নিত করে ছকের মাধ্যমে তা দেখানাে হলাে—

ফেব্রুয়ারি ১ : লেনদেন : এ ঘটনার দ্বারা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখানে ব্যবসায়ে ৭০,০০০ টাকার নগদ সম্পত্তি এবং মালিকের মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এটি একটি লেনদেন।

ফেব্রুয়ারি ৬ : লেনদেন নয় : ফরমায়েশ প্রদানের ঘটনাটি অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য নয় এবং এতে আর্থিক অবস্থার কোনাে পরিবর্তন হয় নি। সুতরাং এটি কোনাে লেনদেন নয়।

ফেব্রুয়ারি ১৫ : লেনদেন : পণ্য ক্রয় করার ফলে ব্যবসায়ে ৩৫,০০০ টাকার ব্যয় বেড়েছে এবং সেই সাথে

সমপরিমাণ নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে। যেহেতু এ ঘটনার দ্বারা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সুতরাং এটি একটি লেনদেন।

ফেব্রুয়ারি ২৩ : লেনদেন : ধারে বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত আসার কারণে দেনাদার/প্রাপ্য হিসাবের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং সেই সাথে বিক্রয়ের পরিমাণও হ্রাস পাবে। ফলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বিধায় এটি লেনদেন।

ফেব্রুয়ারি ২৮ : লেনদেন নয় : এ ঘটনাটি অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য হলেও এর দ্বারা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার কোনাে পরিবর্তন সাধন হয় নি। কারণ এ ঘটনাটি ব্যবসায়ের হিসাবের সাথে সম্পকির্ত নয় বরং মালিকের ব্যক্তিগত হিসাবের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং এটি কোনাে লেনদেন নয়।

সমীকরণ পদ্ধতিতে লেনদেন চিহ্নিতকরণ (Transaction Identification Under Equation based Method) বর্তমান হিসাব বিশারদগণ কর্তৃক প্রবর্তিত সর্বজনস্বীকৃত হিসাব সমীকরণের বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনাকে বিচার ও বিশ্লেষণ করা হয়।

হিসাব সমীকরণ:
সম্পদ = দায় (বহিঃদায়) 5 মালিকানা স্বত্ব (অন্তঃদায়)
Asset =Liabilities + Owners Equity/Proprietorship

সুতরাং হিসাব সমীকরণের মূল উপাদান হচ্ছে ৩টি :
১. সম্পদ (A) ২. দায় (L) ৩. মালিকানা স্বত্ব (OE/P)

কোনাে লেনদেনের মাধ্যমে এ হিসাব সমীকরণের এক বা একাধিক উপাদানে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে অর্থাৎ হ্রাস বৃদ্ধি ঘটবে। এখানে উল্লেখ্য হিসাব সমীকরণের মালিকানা স্বত্ব (OE) উপাদান নিম্নোক্ত ৪টি উপাদান দ্বারা প্রভাবিত (অর্থাৎ হ্রাস বা বৃদ্ধি) হয়:

মূলধন (Capital): মালিক কর্তৃক নগদ অর্থ, পণ্যদ্রব্য বা কোনাে সম্পদ বিনিয়ােজিত (Investment) হলে মালিকানা স্বত্ব (OE) বৃদ্ধি পায়।

আয় (Revenue) : আয় (R) বৃদ্ধি পেলে মালিকানা স্বত্ব (OE) বৃদ্ধি পায় এবং উল্টোভাবে আয় (R) হ্রাস পেলে মালিকানা স্বত্ব (OE) হ্রাস পায়।

খরচ (Expense) : খরচ (Ex) বৃদ্ধি পেলে মালিকানা স্বত্ব (OE) হ্রাস পায় এবং উল্টোভাবে খরচ (Ex) হ্রাস পেলে মালিকানা স্বত্ব (OE) বৃদ্ধি পায়।

উত্তোলন (Drawings) : মালিক কর্তৃক নগদ টাকা, পণ্য, ব্যাংক হতে উত্তোলন দ্বারা মালিকানা স্বত্ব (OE) হ্রাস পায়।

অর্থাৎ, বর্ধিত হিসাব সমীকরণ হচ্ছে: 
সম্পদ = দায় + (মূলধন + আয় – খরচ – উত্তোলন)।
বা, A = L + (C+ R - Ex - D)

সুতরাং এখানে,
A = Assets
L = Liabilities
OE = Owners Equity
R = Revenue
Ex = Expenses
I = Investment-by owner
D=Drawings

এখন আমরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে সমীকরণ পদ্ধতিতে লেনদেন চিহ্নিত করব

গাণিতিক উদাহরণ-২:
জনাব ফারুক ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘মােবাইল সার্ভিসিং সেন্টার' নামক একটি সেবামূলক ব্যবসায় আরম্ভ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে উক্ত ব্যবসায়ে সংঘটিত ঘটনাগুলাে নিম্নরূপ-

সেপ্টেম্বর ১ : ব্যবসায়ে ৪,০০,০০০ টাকা বিনিয়ােগ করা হলাে।
সেপ্টেম্বর ৪ : ৮০,০০০ টাকা মূল্যের মােবাইল সার্ভিসিং সরঞ্জাম ক্রয়ের ফরমায়েশ প্রদান।
সেপ্টেম্বর ৭ : বিমা প্রিমিয়াম পরিশােধ করা হলাে ৯,০০০ টাকা (১ বৎসরের জন্য)।
সেপ্টেম্বর ৯ : সার্ভিসিং সরঞ্জাম ক্রয় করা হলাে ৮০,০০০ টাকা।
সেপ্টেম্বর ১৩ : গ্রাহক কর্তৃক বিলের টাকা পরিশােধ।
সেপ্টেম্বর ১৮ : সার্ভিস সরঞ্জামের ওপর ৫% হারে অবচয় ধার্য করতে হবে।

উপরি-উক্ত ঘটনাগুলাের মধ্যে কোনটি লেনদেন আর কোনটি লেনদেন নয় সমীকরণ পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হলো- 

সেপ্টেম্বর ১ : লেনদেন : এখানে, A = L + OE হিসাব সমীকরণে A ও OE বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এটি লেনদেন।

সেপ্টেম্বর ৪ :লেনদেন নয় : এখানে উক্ত ঘটনা দ্বারা A = L + OE হিসাব সমীকরণের কোন উপাদানের পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং এটি লেনদেন নয়।

সেপ্টেম্বর ৭ : লেনদেন : এখানে, A = L + OE হিসাব সমীকরণের A উপাদানের হ্রাস বৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং এটি লেনদেন।

সেপ্টেম্বর ৯ : লেনদেন : এখানে, A = L + OE হিসাব সমীকরণে A উপাদানের হ্রাস বৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং এটি লেনদেন।

সেপ্টেম্বর ১৩ : লেনদেন : এখানে, A = L + OE হিসাব সমীকরণে A বৃদ্ধি পেয়েছে আবার A হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং এটি লেনদেন।

সেপ্টেম্বর ১৮ : লেনদেন : এখানে, A = L+ OE হিসাব সমীকরণে A ও OE হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং এটি লেনদেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক