সম্রাট জাহাঙ্গীরের ওপর নূরজাহানের প্রভাব আলােচনা কর


প্রশ্নঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের ওপর নূরজাহানের প্রভাব আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সেলিম নূরুদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরােহণ করেন। ইতিহাসে তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর নামেই পরিচিত। তিনি তার পিতার পথ অনুসরণ করে সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণপূর্বক ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য বারােটি আইন প্রণয়ন করে এর নাম দেন 'দস্তুরুল আমল’। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তার শাসনামল একটি ঘটনা বহুল অধ্যায়।

সম্রাটের ওপর নূরজাহানের প্রভাবঃ
সম্রাজ্ঞী হওয়ার পর নূরজাহান নিজস্ব রূপ লাবণ্য ও প্রজ্ঞা দ্বারা জাহাঙ্গীরের ওপর পুরােপুরি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যে নূরজাহানের ক্ষমতাই সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে জাহাঙ্গীর ক্রমশ আরামপ্রিয় হয়ে বিলাসিতার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেন। অন্যদিকে নূরজাহান দিন দিন অভিজ্ঞতা ও শক্তির অধিকারী হতে থাকেন এবং সম্রাটের নামের সাথে তার নামও মুদ্রায় অঙ্কিত হয়। এমনকি সব সরকারি ফরমানে জাহাঙ্গীরের দস্তখতের সাথে তার দস্তখতও থাকত। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর নূরজাহানের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত হন।

নূরজাহানের প্রভাবের ফলাফলঃ নূরজাহানের প্রভাবের ফলাফলকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. সুফল ও খ, কুফল ।

ক. সুফলঃ সম্রাটের ওপর নূরজাহানের প্রভাবের সুফল আমরা তৎকালীন শাসন ব্যবস্থা দ্বারা নির্ণয় করতে পারি। নূরজাহান অনেক সময় সম্রাটের বদমেজাজ ও নিষ্ঠুরতা স্বীয় বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিদ্রোহ দমন, সাম্রাজ্য বিস্তার এবং সুষ্ঠ শাসন পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দেন।

খ, কুফলঃ নূরজাহানের প্রভাব যেমন সুফল বয়ে আনে তেমনি এর অনেক কুফলও রয়েছে। তিনি ক্ষমতার লােভে যুবরাজ খুররম শাহজাহানের পরিবর্তে স্বীয় জামাতা এবং সম্রাটের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ারকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন। ফলে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

উপসংহারঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল ছিল ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার এক ঘটনাবহুল যুগ। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, মুঘল আমলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন এক আকর্ষণীয় চরিত্র এবং তাঁর রাজত্বকাল সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েও শাসনব্যবস্থায় অতুলনীয় অবদান রাখতে সক্ষম হন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক