জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য কী?


প্রশ্নঃ জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখপূর্বক লিঙ্গভিত্তিক অসমতার মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণগুলাে আলােচনা কর।


অথবা, জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখপূর্বক লিঙ্গভিত্তিক অসমতার মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণগুলাে ব্যাখ্যা কর।


ভূমিকাঃ প্রকৃতিগত ভাবেই নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণে নারী ও পুরুষের প্রতি মানুষের সামাজিক আচরণ ও বোঝাপড়া ভিন্ন হয়ে থাকে। নারী ও পুরুষের এ পার্থক্যকে জেন্ডার ও সেক্স দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। নিম্নে বিষয়গুলাে সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হলােঃ

জেন্ডার ও সেক্সের পার্থক্যঃ জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষের মধ্যকার সামাজিক পার্থক্য। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানি যে, নারী ও পুরুষের সামাজিক আচরণ আলাদা, তাদের চাওয়া-পাওয়া আলাদা এবং তাদের চাহিদাও আলাদা। নারী ও পুরুষের চিন্তা-চেতনাও আলাদা। একই সাথে নারী ও পুরুষের প্রতি মানুষের সামাজিক ব্যবহারও আলাদা। এই নিয়মগুলাের পরিচায়কই হচ্ছে জেন্ডার। জেন্ডার হচ্ছে মানুষের সামাজিক নির্ধারক। অপরপক্ষে সেক্স হচ্ছে নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠনগত পার্থক্য। আমরা জানি যে, নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন এক নয়। এই ভিন্নতাকেই বলা হয় সেক্স। সেক্স হচ্ছে মানুষের জৈবিক নির্দেশক।


লিঙ্গ অসমতাঃ সাধারণ অর্থে লিঙ্গ অসমতা বলতে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যকে বােঝানাে হয়। প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তাকে লিঙ্গ অসমতা বলে। বালিন্স-এর মতে, লিঙ্গ অসমতা দু’টি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথাঃ

(১) যৌন তৃপ্তির প্রবলতা; এবং
(২) নারী ও পুরুষের দৈহিক আকার-আকৃতিগত পার্থক্য।

লিঙ্গভিত্তিক অসমতার মনস্তাত্ত্বিক কারণঃ লিঙ্গভিত্তিক অসমতার মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলো নিম্নরূপঃ

(১) নারী ও পুরুষের ব্যক্তিত্বজনিত পার্থক্য।
(২) মন-মানসিকতাজনিত পার্থক্য।
(৩) চাহিদার পার্থক্য।
(৪) সামাজিক দায়িত্বে পার্থক্য।
(৫) নারী ও পুরুষের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত পার্থক্য।


লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জৈবিক কারণঃ জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পাওয়া নারী ও পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জৈবিক কারণগুলাে নিম্নরূপঃ

(১) পুরুষের দেহে এস্ট্রোজেন ও নারীদের দেহে প্রােজেস্টেরন নামক হরমােন বিদ্যমান।
(২) পুরুষের দেহ অম্লীয়, নারীদেহ ক্ষারীয়।
(৩) পুরুষদেহে X ও Y ক্রমােজম ও নারীদের X ও X ক্রোমােজম বিদ্যমান, যা সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা নির্ধারণ করে।
(৪) নারী ও পুরুষের জৈবিক চাহিদাগত পার্থক্য রয়েছে।
(৫) নারী ও পুরুষের শারীরিক কাঠামােগত পার্থক্য রয়েছে।
(৬) নারীদেহ সন্তান ধারন করে, পুরুষের দেহ সন্তান ধারণ করেনা।


পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নারী ও পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক অসমতা নির্ণয়ে মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক উভয় কারণই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে নারী ও পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলি নির্ণয়ে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়াবলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত কারণে মানুষের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। ফলে প্রত্যেক মানুষ নিজেকে পুরুষ অথবা নারী হিসেবে আলাদা করে ভাবতে শিখে। আবার জৈবিক কারণগুলােও লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ প্রত্যেক মানুষ নারী বা পুরুষ হয়ে জন্মায়। ফলে তাদের দৈহিক অনেক পার্থক্য বিদ্যমান থাকে যা তাদের পরিচয় বহন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক