রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী একটি বিজ্ঞান না কলা? রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী আদৌ বিজ্ঞান?


প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী একটি বিজ্ঞান না কলা?
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী আদৌ বিজ্ঞান?


ভূমিকাঃ সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবন ও সমাজ গতিশীল। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চরম অভিব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রশক্তি। তাই যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের তত্ত্ব, সংগঠন, শাসন প্রণালী ও অন্যান্য কার্যাবলী নিয়ে আলােচনা করে, তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলা হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান না কলাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান না কলা এ প্রশ্নটির অবতারণার পূর্বে বিজ্ঞান ও কলা কাকে বলে তা আমাদের জানা দরকার।

বিজ্ঞানের সংজ্ঞাঃ ১৯৫০ সালে ইউনেস্কোর এক আলােচনা চক্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিজ্ঞান হলাে একটি বিষয় সম্বন্ধে সুনিয়ন্ত্রিত চিন্তা, অভিজ্ঞতা, ভুয়ােদর্শন ও গবেষণাপ্রসূত জ্ঞানভান্ডার। অর্থাৎ বিজ্ঞান হলাে কোনাে বিষয় সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞান।

কলার সংজ্ঞাঃ যে বিদ্যা কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্য লাভের জন্য বাস্তব ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে প্রয়ােগ করার নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয় তাকে কলা বলে।


বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে অনেকগুলাে যুক্তি আছে। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তিগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হলােঃ

(১) এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে চরম বিজ্ঞান হিসেবে।

(২) রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর শ্রেণীবিভক্তিকরণ, বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি করা যায় এবং এভাবে শ্রেণীবিভক্ত জ্ঞান থেকে সাধারণ সুত্রের প্রতিষ্ঠাও সম্ভবপর। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান সঠিক অর্থে বিজ্ঞান।

(৩) ব্রাইসের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সাদৃশ্যমূলক আচরণের বিশ্লেষণের দ্বারা সুসংবদ্ধ জান, সাধারণ সূত্র নির্ধারণ। করেন। এই জ্ঞান ও সূত্রসমূহ ভবিষ্যৎ সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ করে।

(৪) গেটেল বলেন, বিজ্ঞান বলতে যদি কোনাে বিষয় সম্পর্কে শৃঙ্খলিত পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পঠন, বিশ্লেষণ, থকীকরণের দ্বারা লব্ধ জ্ঞানভান্ডারকে বােঝায়, তাহলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অবশ্যই বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান না বলার পক্ষে যুক্তিঃ যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন, তারা তাদের বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেন।

(১) বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে স্বীকৃত পদ্ধতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় অচল।

(২) নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে বস্তুজগতের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত ও পরিচালিত হয় । কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তেমন কোনাে নির্দিষ্ট নিয়ম কার্যকরী হয় না।

(৩) রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বিষয়বস্তুর অধিকাংশই বাহ্যিক ও পরনির্ভর । সেই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সকল সিদ্ধান্ত সকল সময় নির্ভুল হয় না।

(৪) অধ্যাপক গিলক্রাইস্টের মতানুসারে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কোনাে স্থির, নির্দিষ্ট এবং অভিন্ন সূত্রের সন্ধান পাওয়া মুশকিল।”

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সমগােত্রীয় হতে পারে না। তবুও স্বীকার করতেই হবে যে, রাষ্ট্রের অতীত ও বর্তমান ইতিহাসের সাথে একটা মিল আছে। তুলনামূলকভাবে রাষ্ট্রের ইতিহাস আলােচনা ও সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণের দ্বারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রের গতি-প্রকৃতি, শাসন পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তার সত্যতা মােটামুটিভাবে প্রমাণিত ও স্বীকৃত।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক