হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ (ধারা ৭)

হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১- ধারা ৭

ধারা-৭ঃ লেখক, গ্রাহক (Drawer, Drawee): বিনিময়পত্র বা চেক যার দ্বারা তৈরী হয় বা লেখা হয় তাকে লেখক (drawer) বলা হয়; আর এভাবে যাকে পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করা হয়, তাকে গ্রাহক (drawee) বলা হয়।

প্রয়ােজনে গ্রাহক (drawee in case of need): যখন কোন বিলে বা উহার অন্য কোন পৃষ্ঠাঙ্কনে মূল গ্রাহক ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়, প্রয়োজনবােধে যে গ্রাহক কর্তৃক বিলটি স্বীকৃত না হলে উক্ত বিলটি স্বীকার করে নিবে, তখন এরূপ ব্যক্তিকে ‘প্রয়োজনে গ্রাহক’ বলে।

স্বীকৃতিদাতা (Acceptor): বিনিময়পত্রে বা তার একাধিক খন্ড থাকলে তার কোন একটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে স্বাক্ষরের পর এবং অনুরূপভাবে অর্পণ করলে কিংবা তার ধারক বা তার পক্ষে অন্য কাউকে অনুরূপ স্বাক্ষরের বিষয়ে নােটিশ দেয়া হলে, তাকে ‘স্বীকৃতিদাতা' বলে।

সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতা (Acceptor for honour): যখন একটি বিনিময়পত্রের অস্বীকৃতি বা উচ্চতর নিরাপত্তার জন্য লিখিত বা প্রতিপাদিত হয় এবং লেখকের সম্মানার্থে যদি কোন ব্যক্তি এতে স্বীকৃতি প্রদান করে, তবে এরূপ ব্যক্তিকে ‘সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতা’ বলা হয়।

প্রাপক (Payee): দলিলের উপর যে ব্যক্তির নাম থাকে, যাকে অথবা যার আদেশে দলিলের নির্দেশিত টাকা পরিশােধিত হয়ে থাকে তাকে “প্রাপক” বলে।

আলোচনা

লেখক বা প্রস্তুতকারক (drawer or maker): হস্তান্তরযােগ্য দলিল প্রস্তুত বা লেখনে প্রস্তুতকারী বা লেখকের স্বাক্ষর প্রদান আবশ্যক এবং এতে সম্মতি দানের প্রমাণ স্বরূপ লেখকের বা তার প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করাও আবশ্যক। কোন অঙ্গীকারপত্রের প্রস্তুতকারক বা কোন বিনিময় বিলের লেখক উক্ত নােট বা বিলের স্বীকৃতি প্রাপ্তি পর্যন্ত এর জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হয়। তারা দলিলের বাহ্যতঃ মেয়াদপূর্তীর মধ্যে দলিলে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ পরিশােধে বাধ্য থাকে বা অনুরূপ অর্থ পরিশােধে ব্যর্থ হলে উক্ত ব্যর্থতার দরুন দলিলের সংশ্লিষ্ট পক্ষ (সমূহ)-কে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়। যখন একটি বিল মেয়াদপূর্তীর পূর্বে স্বীকৃত হয় তখন স্বীকৃতিদাতা দলিলের লেখকের স্থলাভিষিক্ত গণ্য করা হয় এবং অনুরূপ লেখক দলিলের নিশ্চয়তাকারী বা জামিনদাতা হিসেবেও পরিগণিত হয়। তাই বলা হয়ে থেকে যে- "When the bill is not accepted cause of action arises against the drawer on notice of dishonour by non-acceptance and no fresh cause of action arises on dishonour by non-payment." এবং দলিলের অন্যান্য পক্ষও এর প্রস্তুতকারক, লেখক ও স্বীকৃতিকারীর নিকট ক্ষেত্রমত জানিমদার হিসেবে দায়ী থাকে এবং পূর্ববর্তী পক্ষও দলিলের পরবর্তী পক্ষসমূহের প্রত্যেকের নিকট অনুরূপে দায়ী থাকে।

গ্রাহক (drauee): কোন হস্তান্তরযােগ্য দলিলে গ্রাহকের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় বা অন্যকোন ভাবে গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা থাকলে অবশ্যই তা নির্দিষ্টভাবে করতে হয়, যেন ধারক কর্তৃক কোন বিল উক্ত গ্রাহকের মাধ্যমে স্বীকৃতি পেতে পারে, অথবা দলিলের গ্রাহকের সাঙ্কেতিক নাম লেখা থাকলে বা এবিষয়ে অস্পষ্ট কোন বর্ণনা থাকলে, দলিলে যার প্রতি নির্দেশ থাকে তিনি তা সঠিকভাবে বর্ণনা করতে বাধ্য। একটি বিল এক বা একাধিক গ্রাহকের (অংশীদার হােক বা না হােক) নামে বা কোম্পানীর নামে, সমিতিভক্ত হােক বা না হােক এরূপ কোন সংস্থা বা কারাে ব্যক্তিগত নামে লিখিত হতে পারে। যখন কোন বিল চুক্তি করতে অযােগ্য এমন কোন ভুয়া ব্যক্তির নামে লিখিত হয় তখন তা প্রত্যাখ্যাত গণ্য হবে এবং বিলের লেখক দলিলের ধারককে এরজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গ্রাহক কর্তৃক কোন বিল স্বীকৃতি প্রদান না করা পর্যন্ত এর কোন ধারকের দলিলমূলে কোন দাবী সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ যখন গ্রাহক বিলটি স্বীকৃতিদানে অস্বীকার করে তখন দলিলে সংশ্লিষ্ট চুক্তি ভঙ্গ হয়। তাই বলা হয় যে, "The promise implied in the bill is that the drawee shall in case of a bill payable after sight, upon the bill being presented to him in a reasonable time after date, accept the same and having accepted shall pay it when duly presented for payment, and in the case of a bill payable after date that the drawee shall accept it if it is presented to him before time for payment or if it is not presented for acceptance at all then he shall pay than dulv presented for payment.” চেকের ক্ষেত্রে গ্রাহক সবসময়ই কোন না কোন ব্যাঙ্কার হতে হবে এবং উক্ত ব্যাঙ্কার সংশ্লিষ্ট চেকের টাকা পরিশােধের জন্য চেক লেখকের একাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ থাকার শর্তে চেক পরিশােধে বাধ্য থাকে। এভাবে দলিলের স্বীকৃতির পরে উক্ত গ্রাহককে স্বীকৃতিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তখন তিনি হন মূখ্য দেনাদার।

প্রাপক (nayee): যে ব্যক্তি বিল অব একচেঞ্জের অর্থ পেয়ে থাকেন তিনিই প্রাপক। একজন প্রাপক একটি হস্তান্তরযােগ্য দলিলে স্বাক্ষরপূর্বক তা অন্যকে পরিশােধের নির্দেশ দিলে ঐ ব্যক্তি প্রাপক হবেন না [এআইআর ১৯২৬ বােম্বে ২৬২] এবং তিনি হবেন অবশ্যই একজন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি। কোন বিল, নােট বা চেক সাধারণত নিমােক্ত ক্ষেত্রে উল্লেখিত প্রাপকগণের অনুকূলে পরিশােধ্য হয়ে থাকে, যেমন-

(১) কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের অনুকূলে (to certain person or persons); বা
(২) কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির আদেশক্রমে (to the order ofa certain person); বা
(৩) কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা আদিষ্ট ব্যক্তিকে (to a certain person or order); বা
(৪) কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বা এর বাহককে (to bearer); বা
(৫) বাহককে (to bearer)।

যদি কথায় উল্লেখ না থাকে তবে উপরােক্ত (১), (২) এবং (৩) এবং (৪) এবং (৫)নং বর্ণিতদের মধ্যে পার্থক্যকরণ আবশ্যক নয়, যদিও এক্ষেত্রে “বাহক” বলতে “অর্পণের মাধ্যমে ধারক”-কেই বুঝানাে হয়েছে। কোন হুন্ডিতে উল্লেখিত “শাহযােগ” শব্দটির অর্থ ও বাহক”-এর অর্থ এক নয়। এর অর্থ হল এরকম যে, "It means payable to a 'Shah' only, i.e., to a person who is respected in the market or is known as a man of worth and substance in the Bazar."

প্রয়ােজনে গ্রাহক (drawee in case of need): অর্থাৎ বিল লেখক যখন আশংকা করে যে, বিলের গ্রাহক বিল স্বীকার বা পরিশােধ করতে অপারগ বা অনিচ্ছুক হতে পারে, তখন বিলিটিতে তিনি অপর এক পরিচিত ব্যক্তির নাম লেখেন এবং বিলের উপরেই নির্দেশ দেন যে, প্রয়ােজনবােধে অর্থাৎ বিলটি প্রত্যাখ্যাত হলে, ঐ ব্যক্তির নিকট বিল স্বীকার বা পরিশােধের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।

পরবর্তী বিলের কোন পৃষ্ঠাঙ্কনকারীও পৃষ্ঠাঙ্কনের সময় এরূপ ব্যক্তির নাম দলিলে লিখে দিতে পারেন। যদিও হস্তান্তর দলিল আইনের, ১১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, অনুরূপ বিল লেখার বা স্বত্বান্তরের সময় প্রয়ােজনবােধে গ্রাহকের নাম লিখিত হলে যতক্ষণ না বিল ঐ ব্যক্তির নিকট উপস্থাপিত হচ্ছে এবং তিনি উহা প্রত্যাখ্যান করছেন ততক্ষণ তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে গণ্য হয় না। একইভাবে উক্ত আইনের ১১৬ ধারায় আরাে বর্ণিত রয়েছে যে, ঐরূপ বিল প্রত্যাখ্যাত হলেও নােটিং (লিখিত) বা প্রােটেষ্টিং (প্রতিপাদিত) না করেই প্রয়ােজনবােধে গ্রাহকের নিকট উপস্থাপন করা যায় এবং তিনিও প্রােটেষ্টিং-এর পূর্বে উহা স্বীকার করতে বা পরিশােধ করতে পারেন।

স্বীকৃতি (Acceptance): বিভিন্ন প্রকার হস্তান্তরযােগ্য দলিলের মধ্যে একমাত্র বিনিময়পত্রের ক্ষেত্রে গ্রাহক কর্তৃক উক্ত দলিলের স্বীকৃতির প্রয়ােজন হয়। অঙ্গীকারপত্র ও চেক-এর ক্ষেত্রে স্বীকৃতির প্রয়ােজন হয় না। বিনিময়পত্রের লেখক বিল মারফত গ্রাহককে বিলে উল্লেখিত অর্থ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে। গ্রাহক ঐ নির্দেশ স্বীকার করলে বা মেনে নিলে বিলটি বৈধ হয় এবং উহা পরিশােধের জন্য তার দায় সৃষ্টি হয়। গ্রাহক বিলে স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে এ দায় স্বীকার করে নিলে কেবল তখনই বিলটি স্বীকৃত (accepted) হয়েছে বলে গণ্য হবে। সাধারণত উক্ত দলিলের উপর আড়াআড়িভাবে Accepted কথাটি লিখে এবং স্বাক্ষর করে বিল স্বীকার করতে হয়, যদিও Accepted কথাটি লিখা বাধ্যতামূলক নহে। এতে শুধুমাত্র স্বাক্ষর করে উহা স্বীকার করা যায়। মৌখিকভাবে স্বীকৃতিদান করলে বা স্বাক্ষর না করে কেবলমাত্র Accepted কথাটি লিখলে তা স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য হবেনা।

বিনিময় বিলে স্বীকৃতি বিলটির উপরে লিখিত, গ্রাহক বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্বত্বাধিকারীর হস্তে অর্পিত অথবা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে বা তার পক্ষভুক্ত কোন ব্যক্তিকে বিজ্ঞাপিত হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় বিলটি পরিশােধের জন্য গ্রাহক দায়ী হবেনা। বিল স্বীকার করার পর এবং উহা, স্বত্বাধিকারীর নিকট অর্পণ করার পূর্বে গ্রাহক বিলটির স্বীকতি প্রত্যাহার করতে পারে। এক্ষেত্রেও তার কোন দায় সৃষ্টি হবেনা। উক্ত দলিল যদি একাধিক খন্ডে প্রস্তুত করা হয়, তা গ্রাহক যে খন্ডটি স্বীকার করে সে খন্ডের জন্যই তার দায় জন্মায়। তবে একাধিক খন্ডে সে যদি স্বীকৃতি প্রদান করে তাহলে যথাকালে স্বত্বাধিকারীগণের নিকট ঐরূপ প্রত্যেকটি খন্ডের জন্য পৃথকভাবে দায়ী থাকবে। হস্তান্তরযােগ্য দলিল

আইনের ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, স্বীকৃতির জন্য উপস্থাপিত হবার পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রাহককে বিলটি স্বীকার করতে হবে। বিলটি স্বীকৃত বা অস্বীকৃত হলে তা ৪৮ ঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পর স্বত্বাধিকারী নিকট অর্পণ করতে হবে, অন্যথায় বিলটিতে স্বীকৃতিদান করা হয়নি বলে গণ্য হবে। স্বত্বাধিকারী গ্রাহককে বিলটি স্বীকারের জন্য ৪৮ ঘন্টার বেশী সময় দিলে, পূর্ববর্তী সকল পক্ষ ঐ বিলের দায় হতে অব্যাহতি পাবে।

সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতা (Acceptor for honour): হস্তান্তর দলিল আইনের ১০৮ ধারায় এ প্রসঙ্গে বলা আছে যে, বিনিময়পত্রের অস্বীকৃতি বা অধিকতর নিরাপত্তার দরুন নােটিং ও প্রােটেষ্টিং-এর পর উক্ত বিলের জন্য দায়বদ্ধ নহে এরূপ কোন ব্যক্তির বিলের ধারকের সম্মতি নিয়ে যেকোন পক্ষে সম্মানার্থে উক্ত বিলের উপর লিখে এতে তার স্বীকৃতি প্রদান করতে পারে। সম্মানার্থে স্বীকৃতিদানের ব্যাপারে উক্ত আইনে নিম্নলিখিত বিধান বলবৎ রয়েছে, যেমন-

সম্মানার্থে স্বীকৃতিদানের বিধানঃ
(ক) সম্মানার্থে স্বীকৃতিদানের পূর্বে বিল ধারকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক (১৯৮ ধারা।
(খ) সম্মানার্থে স্বীকারে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বিলের উপরে নিজ হস্তে লিখে ঘােষণা করতে হবে যে, প্রতিপাদনের পর বিল লেখকের কোন পৃষ্ঠাঙ্কনকারীর (যার নাম তিনি এতে লিখে দিবেন) সম্মানার্থে প্রতিপাদিত বা সাধারণভাবে অন্যের সম্মানার্থে বিল স্বীকার করছে [১০৯ ধারা]।
(গ) যেক্ষেত্রে কার সম্মানার্থে বিলে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকে না, সেক্ষেত্রে বিল লেখকের সম্মানার্থে এরূপ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।
(ঘ) সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতা অবশ্যই বিল পরিশােধের পূর্বে বিলের সম্পূর্ণ মূল্যের জন্য স্বীকৃতি দান করবে। (ঙ) একই ব্যক্তির সম্মানার্থে উপর্যুপরি একাধিক ব্যক্তি বিলে স্বীকৃতি প্রদান করতে পারেনা। অবশ্য প্রথম সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতার মৃত্যু ঘটলে বা দেউলিয়া হলে, এর পর অপর কেহ একই চুক্তির সম্মানার্থে বিলটি স্বীকার করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক