হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ (ধারা ৬)



হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১- ধারা ৬

ধারা-৬ঃ চেক (Cheque)—“চেক” বলতে কোন নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের উপরে কাটা (drawn) এবং কেবলমাত্র চাহিবামাত্র পরিশােধযােগ্য বিনিময়পত্র বা বিল অব একচেঞ্জ-কে বুঝানাে হয়ে থাকে।

আলােচনা

চেকের বৈশিষ্ট্য (Features ofa Cheque): চেক হল এমন একটি হস্তান্তরযােগ্য দলিল যা প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং ব্যাঙ্কে রক্ষিত তার আমানত হতে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অথবা তার আদেশে কোন ব্যক্তিকে বা বাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদানের জন্য ব্যাঙ্কের প্রতি একটি শর্তহীন লিখিত আদেশ, যার অর্থ চাহিবামাত্র পরিশােধ্য। বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে দেখা যায় যে, চেকও এক প্রকার বিনিময়পত্র এবং বিনিময়পত্রের যে সকল গুণ থাকা প্রয়ােজন চেক-এরও তা থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ চেক লিখিত, লেখক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের এক শর্তহীন আদেশ হওয়া আবশ্যক। তবে চেক-এর অতিরিক্ত দু'টি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, যেমন—(ক) এর গ্রাহক কোন নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক হতে হবে; এবং (খ) সকল ক্ষেত্রেই ইহা চাহিবামাত্র প্রদেয় হবে। অবশ্য বিনিময়পত্রের ন্যায় ইহা আদিষ্ট দেয় বা বাহক দেয়, যেকোন প্রকার হতে পারে। সুতরাং ইহা বলা যেতে পারে যে, সব চেকই বিনিময়পত্র, কিন্তু সব বিনিময়পত্র চেক নহে।

ব্যাঙ্কে যারা টাকা রাখে তারা প্রধানতঃ চেক-এর সাহায্যেই ব্যাঙ্ক হতে অর্থ তুলে থাকে। ব্যাঙ্কে আমানত থাকলেই তবে চেক লেখার অধিকার জন্মায় এবং যে ব্যাঙ্কে আমানত করা হয়েছে কেবলমাত্র সে ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যেই চেক লেখা যায়। তবে ব্যাঙ্কে যে পরিমাণ আমানত আছে তার অধিক অর্থের চেক লেখা যায় না। চেক-এর ভাষা ও ছক বিনিময়পত্রের ন্যায়ই। সাদা কাগজেও চেক লিখবার আইনগত বাধা নাই। তবে আমানতকারীর স্বার্থে সকল ব্যাঙ্কই ছাপানাে চেক-এর কাগজ সরবরাহ করে থাকে। ঐ ছাপানাে কাগজে আমানতকারী প্রয়ােজন অনুসারে টাকার অঙ্ক, প্রাপকের নাম, তারিখ ইত্যাদি লিখে ব্যাঙ্কে উপস্থাপন করে অথবা প্রাপককে দেয়। চেক-এ প্রাপকের নাম, তারিখ ও টাকার অঙ্ক স্পষ্টভাবে বা আদৌ না লিখলে অথবা চেক-এর উপরে আমানতকারীর স্বাক্ষর ব্যাঙ্কে রক্ষিত আমানতকারীর নমুনা স্বাক্ষরের সহিত যদি না মেলে তাহলে ব্যাঙ্ক চেক প্রত্যাখ্যান করতে পারে। চেক যে তারিখে লিখিত হয়েছে সে তারিখে বা তার পরেই উহা প্রদেয় হয়। চেক-এ উল্লিখিত তারিখের পূর্বে চেক উপস্থাপন করা হলে ব্যাঙ্ক তা প্রত্যাখ্যান করে। আবার চেক-এ উল্লিখিত তারিখের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চেক ব্যাঙ্কে উপস্থাপিত না হলে উহা পুরাতন বলে গণ্য ও প্রত্যাখ্যান হয়।

চেক-এর বিভিন্ন পক্ষ (Parties to a Cheque): চেক-এর ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ জড়িত থাকে। আমানতকারীকে অর্থাৎ যে ব্যক্তি চেক লিখে তাকে Drauter (চেক-লেখক), যে ব্যাঙ্কের উপর চেক লেখা হয় তাকে Drauee (চেক-গ্রাহক বা ব্যাক) এবং চেক-লেখক যে ব্যক্তিকে বা তার আদিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থ প্রদানের জন্য আদেশ দেয়, তাকে Payee (প্রাপক) বলা হয়। চেক-এর ক্ষেত্রে আরও তিনটি পক্ষ জড়িত থাকে, যেমন প্রাপক বা অন্য যার হাতে চেক থাকে তাকে ধারক, চেক-এর স্বত্বান্তরকারীকে স্বত্বদাতা এবং যাকে স্বত্ব হস্তান্তর করা হয় তাকে স্বত্বগ্রহীতা বলা হয়।

চেক ও বিনিময়পত্রের মধ্যে পার্থক্য (Difference between a Cheque and a Bill of Exchange)ঃ এতদুভয়ের মধ্যে যেসকল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তা নিম্নরূপঃ

চেক (Chque): (১) চেক কেবলমাত্র ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যেই লেখা হয়।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (১) বিনিময়পত্র যেকোন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে, এমন কি ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যেও লেখা যায়।


চেক (Chque): (২) চেকের উপর ষ্ট্যাম্প লাগাতে হয় না।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (২) কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া বিনিময় বিলে ষ্ট্যাম্প লাগান আবশ্যক।

চেক (Chque): (৩) চেকের অর্থ সর্বদাই চাহিবামাত্র প্রদেয় (Payable on demand)।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৩) বিনিময় বিলের টাকা চাহিবামাত্র বা নির্দিষ্ট সময় পরে প্রদেয়, দু'প্রকারই হতে পারে।

চেক (Chque): (৪) গ্রাহক কর্তৃক চেক স্বীকারের প্রয়ােজন হয় না, কারণ ইহা চাহিদামাত্র প্রদেয়।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৪) কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া গ্রাহক কর্তৃক বিনিময় বিলের স্বীকার আবশ্যক।

চেক (Chque): (৫) চেকের অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাঙ্ককে রেয়াতি সময় (Days of Grace) দেয়া হয় না।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৫) নির্দিষ্ট সময় অন্তে প্রদেয় বিলের ক্ষেত্রে বিলের স্বীকৃতিকারীকে হুন্ডি পরিশােধের জন্য মেয়াদপূর্তীর (maturity) পরও রেয়াতী সময় {days of grace) হিসাবে ৩ দিন অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়।

চেক (Chque): (৬) চেক রেখাঙ্কিত করা যেতে পারে।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৬) বিনিময়পত্র রেখাঙ্কিত করা যায় না।

চেক (Chque): (৭) ইচ্ছা করলে চেক-লেখক চেকের অর্থ প্রদানের পূর্বে তার আদেশ প্রত্যাহার বা রদ (Countermand) করতে পারে।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৭) বিনিময়পত্র প্রত্যাহার করা যায় না।

চেক (Chque): (৮) চেক ব্যাঙ্কে উপস্থাপিত করতে বিলম্ব হলে চেক-লেখকের দায়মুক্তি ঘটবে না। অবশ্য এরূপ বিলম্বের ফলে তার কোন ক্ষতি হলে চেক-লেখকের দায়মুক্তি ঘটবে। যেমন—ধারক মেয়াদপূর্তীর দিনে চেকটি ব্যাঙ্কে দাখিল না করে উহা দু’মাস রেখে দেন। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কটির অবসায়ন হয়। যদি চেকটি পূর্বে দাখিল করা হত তাহলে চেক বাবদ অর্থ দেয়া হত। চেক দাখিল করতে অহেতুক বিলম্ব ঘটায় লেখকের টাকা হারাতে হল। সুতরাং এক্ষেত্রে ধারক চেক লেখকের নিকট হতে টাকা পাবে না। অহেতুক বিলম্বের সীমা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৮) মেয়াদী তারিখে বিনিময়পত্র আদায়ের বিল স্বীকৃতিকারীর নিকট উপস্থাপিত না হলে বিল লেখকের দায়মুক্তি ঘটবে।

চেক (Chque): (৯) ব্যাঙ্ক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যাত (dishonoured) হলে প্রত্যাখ্যানের বিজ্ঞপ্তি (notice of dishonour) চেক-লেখকের উদ্দেশ্য দিতে হয় না, কিন্তু চেক-লেখকের দায় অব্যাহত থাকে।
বিনিময়পত্র (Billof Exchange): (৯) বিনিময়পত্র প্রত্যাখ্যাত হলে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত প্রাপক বা ধারককে বিল লেখকের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

চেক ও অঙ্গীকারপত্রের মধ্যে পার্থক্য (Difference between a Cheque and a PromissoryNote): চেক ও অঙ্গীকারপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য দৃষ্ট হয়ঃ

(১) চেক হল আমানতকারী কর্তৃক তার ব্যাঙ্কের উপর, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য এক লিখিত আদেশ। পক্ষান্তরে, অঙ্গীকারপত্র হল দেনাদার কর্তৃক পাওনাদারের নিকট প্রাপ্ত ঋণ পরিশােধের এক লিখিত প্রতিশ্রুতিপত্র। চেকের ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ থাকতে পারে, যথা—চেক-লেখক (Drauper), চেক-গ্রাহক বা ব্যাঙ্ক (Drauee), এবং প্রাপক (Payee) এবং কিন্তু অঙ্গীকারপত্রে দেনাদার (Debtor) এবং পাওনাদার (Creditor) এই দুটি পক্ষ থাকে।

(৩) চেকের টাকা চাহিবামাত্র প্রদেয়, কিন্তু অঙ্গীকারপত্রের টাকা, অঙ্গীকারপত্রে চাহিবামাত্র প্রদানের উল্লেখ না থাকলে সাধারণতঃ নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তে উহা প্রদেয় হয়ে থাকে।

(৪) চেক রেকাঙ্কিত হতে পারে, কিন্তু অঙ্গীকারপত্র রেখাঙ্কিত হয় না।

(৫) চেক প্রত্যাখ্যাত (dishonoured) হলে ব্যাঙ্ক কর্তৃক চেক-লেখকের নিকট প্রত্যাখ্যানের বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় না, কিন্তু অঙ্গীকারপত্রের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিদাতার নিকট প্রত্যাখ্যানের বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করতে হয়।

(৬) চেকে কোন ষ্ট্যাম্পের প্রয়ােজন হয় না, কিন্তু অঙ্গীকারপত্রে আইন অনুযায়ী ষ্ট্যাম্প থাকা প্রয়ােজন।

চেক-এর শ্রেণীবিভাগ (Classification of Cheques): চেক যে সকল প্রকারের হতে পারে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ

(১) বাহক-দেয় চেক (Bearer Cheque): যে চেক-এর অর্থ গ্রাহক ব্যাঙ্ক চাহিবামাত্র চেক-এ উল্লিখিত প্রাপক বা বাহকের হস্তে প্রদান করে, তাকে বলা হয় বাহক-দেয় চেক।

(২) আদিষ্ট-দেয় চেক (Order Cheque): যে চেক-এর অর্থ কেবলমাত্র চেক-এ উল্লিখিত প্রাপককে বা আদিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় আদিষ্ট-দেয় চেক। এরূপ চেক এর অর্থ হল, যে কেউ ইচ্ছা করলেই ব্যাঙ্ক হতে এর টাকা উত্তোলন করতে পারেনা, নিরাপত্তা অটুট থাকে।

(৩) রেখাঙ্কিত চেক (Crossed Cheque): যে চেক-এর উপর বাম কোণায় আড়আড়িভাবে দু’টি সমান্তরাল সরল রেখা অঙ্কিত থাকে, তাকে বলা হয় রেখাঙ্কিত চেক। উক্ত রেখার মধ্যে কিছু লেখা থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। রেখাঙ্কিত চেক-এর অর্থ ব্যাঙ্ক হতে হাতেহাতে সংগ্রহ না করে বরং প্রাপকের হিসেবে জমা দেয়ার মাধ্যমে তা সংগ্রহ করতে হয়, বিধায় এ চেক অধিক নিরাপদ। লেখার তারতম্য হারে এ চেককে দুভাবে ভাগ করা হয়, যেমন—(ক) সাধারণ রেখাঙ্কিত চেক ও (খ) বিশেষ রেখাঙ্কিত চেক।

(৪) বিবিধ চেক (Misc. Cheque): উপরােক্ত প্রকার চেক ছাড়াও আরাে কয়েক প্রকার চেক দেখা যায়, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ

(ক) ফাঁকা চেকঃ এসকল চেক-এ সব কিছু যথার্থভাবে পূরণ করা সত্বেও প্রাপকের নামের ঘর বা টাকার অঙ্ক লেখার ঘর ফাকা রাখা হয় এবং প্রাপক উক্ত ফাঁকা স্থানে ইচ্ছামত নাম ও টাকার ব্যবহার করে তা ব্যবহার করেন।

(খ) চেক কার্ডঃ যে চেক-এর দ্বারা নির্দিষ্ট বাজারে বা নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক কেন্দ্রে বাজার করা যায় তাকে চেক কার্ড বা মার্কেট চেক বলে। মূলত এক্ষেত্রে দ্রব্যসামগ্রীর দাম হিসেবে নগদ অর্থ প্রদানের পরিবর্তে কার্ড ইস্যু করা হয়।

(গ) পূর্ব ও পরবর্তী তারিখের চেকঃ কোন চেক-এ ইস্যর তারিখের পূর্বেকার বা পরবর্তী কোন তারিখ উল্লেখ করা হলে তা এ প্রকার চেক-এর অন্তর্গত। সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়াই এরূপ চেক-এর উদ্দেশ্য।

(ঘ) বাতিল চেকঃ প্রস্তুতকৃত কোন চেক-এ ইস্যুর তারিখের পর ভাঙ্গানাের যে শেষ সময়সীমা ব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট করে এবং তার মধ্যে চেক ভাঙ্গানাে না হলে উক্ত চেককে বাসি চেক বা বাতিল চেক বলে। আমাদের দেশে সাধারণত এ মেয়াদ ছয় মাস।

(ঙ) অনুমােদিত চেকঃ কোন চেক প্রস্তুতের পূর্বে বা পরে এর অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বা ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি প্রদান করা থাকলে তাকে অনুমােদিত চেক বলে।

(চ) ভ্রমণ চেকঃ ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে অর্থ সগ্রহের জন্য ব্যাঙ্ক যে বিশেষ ধরনের চেক ইস্যু করে তাকে ভ্রমণ চেক বলে।

(ছ) উপহার চেকঃ এরূপ চেক অনেকটা প্রাইজবন্ডের মত। এতে নির্দিষ্ট মেয়াদে সুদ ও এর মাধ্যমে পুরস্কার দেবারও ব্যবস্থা থাকে।

(জ) আগাম চেকঃ চেকদাতা কর্তৃক আগাম তারিখ লিখে যদি কোন চেক ইস্যু করেন তবে তাকে ‘পােষ্ট ডেটেড' বা আগাম চেক বলা হয়, যা অত্র আইনের বিধান মতে স্বীকৃত এবং এ চেক নির্দিষ্ট তারিখে পেশপূর্বক পরিশােধ্য [১৯৫৬ মাদ্রাজ এলজে ৪৭১]। এধরনের চেক সম্পর্কে অত্র আইনের কোন বিধান পরিদৃষ্ট না হলেও ইহা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রাহ্য (এআইআর ১৯২৫ ক্যাল ১০০৭)।

(ঝ) ডিডিঃ ব্যাঙ্ক কর্তৃক ইস্যুকৃত ডিমান্ড ড্রাফট কোন চেক নয়, যদিও চেকের সহিত ডিডি’র পার্থক্য খুব সামান্যই। সাধারণতঃ ডিডি এক ব্যাঙ্ক হতে অন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভাঙ্গাতে হয়, কিন্তু চেক কোন ব্যক্তির কাছেও ভাঙ্গানাে যায়, আবার ডিডি প্রত্যাখ্যান করে লেখক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে পারেন না, যদিও চেকের ক্ষেত্রে তা সম্ভব [এআইআর ১৯৫৭ আসাম ১৩৩ (ডিবি)]।

(ঞ) এটিএম কার্ডঃ কম্পিউটারে ব্যবহৃত ফ্লপি ডিস্কের আদলে তৈরী এ কার্ড সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক তার একাউন্ট হােল্ডারকে চেক বই-এর পরিবর্তে প্রদান করে থাকে। কার্ডটি এটিএম মেশিনে ঢুকালে একাউন্ট হােল্ডারের কাঙ্খিত পাসওয়ার্ড ডিসপ্লে হবে ও গ্রাহকের গােপন একাউন্ট নাম্বারটি প্রদান করতঃ জমাকৃত টাকার ব্যালেন্স প্রদর্শিত হয় এবং গ্রাহক তার প্রয়ােজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে কয়েকটি বিদেশী ব্যাঙ্কে এ কার্ডের প্রচলন স্বল্প পরিসরে পরিলক্ষিত হয়। তবে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সর্বস্তরের চালু হলে হয়ত ভবিষ্যতে কাগুজে পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ অধিকতর নিরাপত্তা ভােগ করতে পারবেন।

(ট) মাষ্টার কার্ড বা ভিসা কার্ডঃ এটিএম কার্ডের মত এটিও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃক একাউন্ট হােল্ডারকে সরবরাহ করা হয়। উন্নত দেশসমূহে এ পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন দেখা গেলেও বাংলাদেশে এটি স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে। বিপণী হতে কার্ড হােল্ডারগণ প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারেন।

চেকের নমুনাঃ

জাল চেকঃ সাধারণত যে চেক দ্বারা ব্যাঙ্ক হতে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে এতে তারিখ, টাকার অঙ্ক, প্রাপকের নাম বা সহি ইত্যাদি পরিবর্তন করে চেক তৈরী করা হয়, তাকে জাল চেক বলে। এ ধরনের পরিস্থিতি মােকাবেলার জন্য সাধারণত ব্যাঙ্কের যেসব করণীয় তাহল-

(ক) চেকে উল্লেখিত তারিখের সঠিকতা নির্ণয়, (খ) চেকে উল্লেখিত ক্রমিক নং পরীক্ষা করণ, (গ) যে ব্যক্তির নিকট টাকা পরিশােধের জন্য অনুরােধ করা হচ্ছে সে ব্যক্তি প্রকৃত প্রাপক কিনা তা খুঁতিয়ে দেখা, (ঘ) ব্যাঙ্কে রক্ষিত চেকদাতার নমুনা স্বাক্ষরের সহিত চেকে সরবরাহকৃত স্বাক্ষরের মিল যাচাই করা, (ঙ) চেকের টাকা পরিশােধের নিমিত্তে ব্যাঙ্কে চেকদাতার হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ, (চ) চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ অংকে ও কথায় সঠিকভাবে লিখা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষাকরণ, (ছ) কোন গ্রাহকের চেক বই হারানাে গেলে এ তথ্য যদি ব্যাঙ্কে জানানাে হয় তবে সে মােতাবেক জাল চেকটি খুঁতিয়ে দেখা, (জ) চেক দাতার প্রতি আদালতে কোন নির্দেশ রয়েছে কিনা তা দেখা, (ঝ) চেকটি রেখাঙ্কিত কিনা, হলে সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদন, ইত্যাদি।

ছেড়া চেকঃ একটি চেক যেকোন প্রকারে ছিড়তে বা বিকৃত হয়ে যেতে পারে। অনুরূপে বিনষ্ট হওয়া বা ছিড়ে যাওয়া চেকের বিধীর্ণ অংশগুলাে যদি জোড়া লাগিয়ে চেকের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনা না যায় তবে তা অগ্রাহ্য হতে পারে। তদুপরী চেকটি রেখাঙ্কিত হলে তা সংগ্রহকারীর ব্যাঙ্কের নিশ্চয়তা ব্যতীত পরিশােধ্য বলে গ্রাহ্য হয় না।

বাসী চেক এবং পােষ্ট-ডেটেড চেক (Ante-dated cheque & Post-dated Cheque): তারিখ-পূর্ব ও তারিখ পরবর্তী কেবলমাত্র একটি চেকের পরিশােধের তারিখকে একটি ভবিষ্যতের কোন তারিখের জন্য স্থগিত করার ঘটনা দ্বারা দাবীক্রমে প্রদেয় ছাড়া বা প্রকারান্তরে কার্যকর ব্যতীত অন্যভাবে প্রদেয় হবেনা। একটি চেকবাসী চেক (তারিখ-পূর্ব চেক) অথবা পােষ্ট ডেটেড চেক (তারিখ-পরবর্তী চেক) আইনের দৃষ্টিকোণ হতে পক্ষসমূহের মধ্যে উহা কোন তারতম্য সৃষ্টি করে না; উল্লেখিত তারিখের পরে যেকোন সময় উপস্থাপিত হলেই উহা প্রদেয় হবে [52 Cal.677]। প্রত্যাখাত একটি পােষ্ট-ডেটেড চেকে বর্ণিত অর্থ আদায়ের জন্য আনীত মামলায় চেকটি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রাহ্য হয় [16 Cal. 432]। একটি রবিবার অথবা ছুটির দিনে একটি চেক কাটা যাবে (drawn upon), কিন্তু কোন পক্ষের উপরে প্রতারণার উদ্দেশ্যে একটি চেক বাসী বা ante-dated হতে পারেনা [AIR 1925 Cal. 1007]।

রশিদ একটি চেক নয় (Receipt is not a Cheque): বাহকের নাম সম্বলিত এমন প্রকারের দলিল, যাতে একটি সঞ্চয়ী ব্যাঙ্কের আমানতকারী অর্থ প্রাপ্তি স্বীকার করে, উহাকে একটি রশিদ বলে এবং একটি চেকের মত উহাতে ষ্ট্যাম্প শুল্ক লাগবে না [131C.830]। কোন একটি চিট দ্বারা যদি কোন একটি অংকের অর্থ পরিশােধ করার অনুরােধ করা হয়, সেক্ষেত্রে সে চিট বা চিটা একটি চেক অথবা একটি বিনিময় বিল হিসেবে গণ্য হবেনা।

চেক-এর সাক্ষ্যগত বা প্রামাণিক মূল্য (Evidentiary valute of Cheque): উপস্থাপন করা হয়েছে এমন একটি চেকের অর্থ পরিশােধ করা হলেও তা কোন প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যাবেনা, কারণ গ্রাহকের ব্যাঙ্কের) চেকের অর্থ ধার অথবা অগ্রিম ঋণ প্রদান করেছেন এটাও গণ্য করা যায় [12 M. 5731] আবার, চেক হচ্ছে ব্যাঙ্কের হস্তে চেক লেখক কর্তক পূর্বে গচ্ছিত অর্থ পরিশােধের দৃষ্টতঃ বা প্রথম লব্ধ ধারণার (prina facie) উপরে প্রতিষ্ঠিত সাক্ষ্য বা প্রমাণবিশেষ [16 A. 321]। একবার ড্র করা চেক, কিন্তু উপস্থাপিত হয়নি—এরূপ একটি চেক কোন প্রমাণ বহন করে না যে প্রাপক কর্তৃক পূর্বে ড্রয়ার (darter)-এর নিকট টাকা ধার দেয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক